বাড়ন্ত দুনিয়ার বাড়ন্ত সম্ভাবনা

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

সব কথা বলা যাবেনা এক জীবনে
তাই আরেক জীবনের সম্ভাবনা বাড়ছে ধীরে ধীরে।
অথচ এই বাড়ন্ত সম্ভাবনাকে কতোভাবেই- না শাসিয়ে রেখেছে ইতিহাস!

যে- চালার নিচে বসে আমি এই বাড়ন্ত কথাগুলো লিখছি,
সেটিও হতে পারে বাড়ন্ত জীবনের আরেক ধরনের প্যাপিরেসিয় অস্তিত্ব;
যদি আমিই বাড়ন্ত হই, আমার দুঃখও বাড়ন্ত, তাহলে আমার সুখও বাড়ন্ত হতে বাধ্য।

আর শব্দের সাথে কুশলি-আলাপচারিতায় যে সাগরে পাল তুলেছি-
ভাষা ও অস্তিত্তের বাড়ন্ত সম্ভাবনায়
তাকে তুমি কি বলবে?
বাড়ন্ত দুনিয়ার বাড়ন্ত সম্ভাবনা!

০৫/১১/২০১৪

হে আমার প্রাগৈতিহাসিক অনিশ্চিত বন্ধু

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

কোথায় নিয়ে যাবে?
হে অনিশ্চিত পদযাত্রা,
নিয়ে চলো শূন্যে,
নিয়ে চলো সৌহার্দ্যে,
নিয়ে চলো অন্ধকারে,
অনর্থ যেখানে হাতছানি দেয় চিরকাল।

বৃষ্টি ভেজা নরম মাটির ঘর
দেবে যাবে জানি অনিশ্চিত পাতালপুরীতে,
পাহাড় ধসবে, পলি জমবে, হিমবাহ গড়াবে,
আরও- কত কি?

অভিশাপের কম্পনে কম্পিত নয় যার হৃদয়
তার কাছে অনিশ্চিত আকাশ,
অনিশ্চিত আকার,
অনিশ্চিত অন্ধকার
সবই নিশ্চিত
হে আমার
প্রাগৈতিহাসিক অনিশ্চিত বন্ধু!

০৬/১১/২০১৪


ভালোবাসাকে অনুভব করবে বলে

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

তুমি কি কখনো বৃষ্টি নামতে দেখেছো?
আকাশের ছায়াময় উৎসবে-
দুঃখরা যেভাবে ঝরে পড়ে অঝোর ধারায়!

তুমি কি কখনো বৃষ্টির উম্মাদনায় দুলেছ?
সহজাত নেশায়, পিতৃপরিচয়হিন উলঙ্গ শিশুর উচ্ছলতায়,
আকাশ থেকে পাওয়া পাপমোচনের সূত্র ভেবে?

তুমি কি কখনো নিজের মতো বৃষ্টিকে অনুভব করেছ?
নাগরিক দুর্ভোগের নির্মম বাস্তবতায়-
প্রকৃতি কতো প্রশান্ত, প্রশস্ত! উজাড় করে সবকিছু-
ঝাঁজরার মতো শুধু ভালোবাসাকে অনুভব করবে বলে!

০৮/১১/২০১৪

মৃত্যুর সাথে বন্ধুতা

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

মৃত্যুর সাথে বন্ধুততা
শহুরে গুহামানব!
ঘৃণা আর হিংস্রতার ছুরি
সদাই জাগ্রত জানালার কোণে
সময়ের প্রয়োজনে কেউ কেউ আসে
অসময়ের কুকুরছানারা আর আসে না।
রবাহূত বলতে কিছু পুরোনো স্মৃতি,
যাদের ওজন পৃথিবীর ভরেরও বেশী!
চল্লিশাের্ধ মানুষটার যোগাযোগ মহাকাশের সাথে-
২৪ ঘণ্টা সালোকসংশ্লেষণ চলছে অনবরত!

১২/১১/২০১৪

একদিন শুক্রবার

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

একদিন শুক্রবার
আমার একমাত্র সন্তান
বাসায় নেই, মায়ের সাথে নানার বাড়ি।
যাবার বেলায় তার আনন্দের শেষ নেই,
তাই তার ডাইনোসর, হরেক রকম প্রানি আর গাড়িঘোড়ার খেলনাগুলো
এলোমেলো করে রেখেছে পুরো ঘরের মেঝেতে।

আমি হঠাৎ অন্য মানুষ-
আবার অনুপ্রাণিত হলাম,
জানালার সূর্যের আলো আড়াআড়িভাবে ঝুঁকে,
ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে দিলো হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে খুঁজতে।
এবার আমি গভীর মনোযোগে খেলায় মেতে উঠলাম-
নানারকম বন্য প্রাণীদের মাঝে আমার উইলি-জীপ খানা চলছে-
কেনিয়ার একটা বিশাল অভয়ারণ্যের ভেতর---- ।

আস্তে আস্তে রোদ হেলে পড়ে----
কলিং বেল বেজে উঠে---
আমি দরজা খুলেই বুঝলাম,
এতক্ষন ছত্রিশ বছর আগের
'টাইম-মেশিনের' ভেতরেই ছিলাম------

আমার সন্তান আমাকে শাসিয়ে বললো-
"তুমি আর কক্ষনো আমার খেলনা ধরবে না!"
তারপর আবার আমি দৈনন্দিন জগতের দুঃখের সাগরে
নিষ্পেষিত হলাম!

১৪/১১/২০১৪

কেউ-না-কেউ তোমাকে সাড়া দেবেই

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

কোথাও সুযোগ নেই?
হতাশ হওয়ার কিছু নেই,
কারণ এখনও তোমার মাথার ওপর সূর্য ওঠে।
চাঁদের আলোয় আলোকিত খোলা আকাশের নীচে হাত-পা ছড়িয়ে দাও।
দ্যাখো, তোমার আকাশে অফুরন্ত স্বর্গ, গ্যালাক্সি, আলোর পরে আলোর হাতছানি।
আর তুমি যে পৃথিবীর ঘাসের ওপর গা এলিয়ে দিয়েছ, সেখানেও আছে প্রায় দু'শর কাছাকাছি দেশ,
সাইবার বিশ্ব,
কল্পনা আর বাস্তবের মিলনমেলা,
সাতশ কোটি মানুষ!
তাদের লক্ষ লক্ষ ঘর!
দরজায় কড়া নেড়ে দ্যাখো- না?
দেখবে, কেউ-না-কেউ তোমাকে সাড়া দেবেই।

১৫/১১/২০১৪

তিনটি দশক

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

চেয়েছিলাম শুধুই আনন্দময় উপস্থিতি হতে
কিন্তু হয়ে গেলাম 'আমি'!
এই 'আমিত্ব' ঘোচাতেই কেটে গেল
তিনটি দশক!

১৬ই অক্টোবর, ২০১৩

পাণ্ডুলিপির শেষের পাতায়

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

পাণ্ডুলিপির শেষের পাতায়
আপাতত কোনো সুমাপ্তি নেই
কোনো সমাধান নেই
আত্ম উপলব্ধির জটিল প্যাঁচে
জড়িয়ে গেছে কাব্য সৃষ্টির মর্ম
হও যদি তুমি বুদ্ধিমান
ঢুকতে পারো এই “পাণ্ডু” পিরামিডের ভেতর
শব্দের সাথে আলাপচারিতায় বুঝবে
কাব্য-অকাব্যিকতায় কতো দুঃখ ছিলো
ঝড় বৃষ্টির নিঃশেষে শান্ত চাঁদের মতন
ঐ সৃষ্টিতে কতো শান্তি ঝরে
ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করো?
নয়তো তার ছোট বিবেককে
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে জানতে পারো
কে কতো বিশুদ্ধ কবিতা লিখলো!

২০০১


প্রেমের কার্নিভাল

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

খুলে দিলাম সবকটা জানালা
নশ্বর এই দেহের,
যাতে প্রেমের কার্নিভাল উৎসবে মেতে উঠি
লজ্জাহীন, দিগম্বর হয়ে,
আর মিশে যাই
সর্বময়!

১৮/১১/২০১৪

পৃথিবীর সব রঙ ঝরে পড়ে একদিন মৃত্যুঞ্জয়ীর ঠিকানায়

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

পৃথিবীর সব রঙ ঝরে পড়ে একদিন মৃত্যুঞ্জয়ীর ঠিকানায়
পৃথিবীর সব সুখ আর কাল্পনিক দুঃখ মিলেমিশে একাকার,
বিজ্রিত-বাদ্রো, মেরেলিন-মনরো, সব ফ্যান্টাসি
অথবা ভ্যান-গগের দুঃখ মাখা অবশ্যম্ভাবী চিত্র জগত,
সবই আসলে টালমাটাল মৃত্যুঞ্জয়ী পরমানন্দময় হাওয়ায়
বাসার মূল্যবান চাবি, দামি দামি গহনা
কিচ্ছু নয় বন্ধু, মিথ্যে আশ্বাসের প্রেতাত্মা
মৃত্যুঞ্জয়ীর ধুলো মাখো বন্ধু সময় থাকতে
দেখবে তুমিও একদিন মৃত্যুঞ্জয়ী হবে
ইজেলের ওপর রঙ মাখানো ইঙ্কমপ্লিট সকালে।।

১৯/১১/২০১৪

আশাহীন মানুষ

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

আশাহীন মানুষের - আশাহীন স্বপ্ন
আশাহীন সুর - আশাহীন রোদ্দুর
আশাহীন পথচলা - আশাহীন নিরাশা!
সুখ বলতে - ঐ কিছু মৃদু তৃপ্তি -
ইলিশ মাছের ঝোল যেন -
বর্ষার বাঁধ ভাঙ্গা জল -
যখন একদল কিশোরকিশোরী -
মেতে উঠত জলকেলি খেলায় -
অদৃশ্য আনন্দে - অনাবিষ্কৃত শিশ্ন !-
আজ এই মাঝ বয়সের পরম প্রশান্তি!

২৩/১১/২০১৪

কি দারুন মাটির গন্ধ

- কায়সার মোহাম্মদ ইসলাম

অনেক হল
মানুষ হতে গিয়ে
মাটির গন্ধ শুকে, মানবিক উর্বরতায় কেটেছে যার শৈশব-
যে কিনা রঙের বৈষম্য শিখেছে আনমনে হরেক রকম কোমল পাতা ঘষে ঘষে
বালির বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে যে রপ্ত করেছে জোয়ারভাটার হিসেব নিকেশ
চলন্ত গাড়ীর ভেতর থেকে চাঁদ দেখে বুঝতে শিখেছে-
কেন চাঁদ স্থির থাকে যদিও- চাকা ঘুরছে অনবরত!
আরও কতকি? পৃথিবীটা গোল, মেঘ থেকে মানুষের অবয়ব-
খুঁজে এনে দ্বৈত জগত সৃষ্টি করা-
কিন্তু সবই জঞ্জালে গেলো যখন তাকে কোমল মণ্ডে পরিবর্তিত করা হল শিক্ষাদানের নামে-
তারপর হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, চারিদিকে অন্ধকার-
কোটি কোটি মণ্ডের মাঝে কিছুতো উচ্ছিষ্ট নোংরা হবেই-
মানুষ তৈরির কারখানায়, খামখেয়ালিপনায়!
এবার একটি প্রতিষ্ঠিত মণ্ড যে কিনা ধীরে ধীরে একজন সফল রোবটে রুপান্তরিত হল-
সে আমাকে শাসিয়ে গেলো কীরে মানুষ কেন হলিনা এই জনমে?
আমি তাকে উত্তর দিলেম- অনেক হল-
মানুষ(রোবট) হতে গিয়ে
যখন ব্যর্থ হলাম
তাই এখন কুকুর হয়ে বাকী জীবন পার করিয়ে দেবার সপ্ন
শক্ত জোড়া নাকের ওপর ভর করে শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসে থাকবো
আর ঘ্রান নিবো
আহ্ কি দারুন মাটির গন্ধ!



২২শে সেপ্তেম্বের,২০১৩

woman in black long sleeve shirt and blue denim jeans sitting on white concrete wall
woman in black long sleeve shirt and blue denim jeans sitting on white concrete wall