Bangla Poem
হাওয়া লতা
লেন্দেনহীন এক মানুষ
লোকে বলে এ আমার
এক ধরনের অহংকার;
সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করার
এক ধরনের প্রক্রিয়া;
জানো আমি কতোটুকু সুখি
এই আবদ্ধ রুমে
ঐ আপরাইট পিয়ানোটা
আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়-
আমার পরম সত্তায়,
এই, এই যে হাত রাখলাম,
একটা মাইনর ইম্প্রভাইজেশন,
তারপর আবার নতুন দিনের নতুন শুরু
প্রতিধ্বনিত হোক বারবার
কেঁপে উঠুক আবদ্ধ ঘর;
আমার কান আমার দর্শক;
ষোড়শ শতাব্দীর অপেরার শ্রোতা;
চোখদুটি ক্রুশে বিদ্ধ যীশুর,
ঐশ্বরিক ইচ্ছের দুটো হাত,
অন্ধকারে লুকানো আলো
আমার বেঁচে থাকার উৎস;
জাগো প্রাণ, জাগাও উৎস
টিকে থাকো,
ঐ পাথুরে দ্বীপের মতন।
কাব্যগ্রন্থঃ আকাশের স্টাফ নোটেশান(২০০০)
মানিয়া
তোমার নরম সুন্দর মুখশ্রী
আমার হৃদয়ের ব্যাথা হয়ে
ফিরে আসে একটি স্বপ্নে;
তুমি যেন অনেক আগের চেনা,
সেই এক হাজার বছর আগের;
যখন এদেশে কোন বিদেশী আসেনি
আমি ঘুরে বেড়াতাম বাঁশি হাতে বৃন্দাবনে-
তুমি খোলা শরীরে চুল এলিয়ে চাঁদ দেখতে…
ওসব ইতিহাস আর মনে আনতে চাইনা
আমি তোমার পোর্ট্রেট আঁকবো না
মানিয়া, তুমি এখন ক্লিওপেট্রা,
কেউ কিং সিজার- কেউবা ক্রীতদাস;
আর, আমি নির্জীব বেকার;
সবাই মেলে দিচ্ছে
স্ব স্ব ক্ষমতা, মৌনতা,
উজাড় করছে পৌরুষ;
আমি ইজেল নিয়ে বসে আছি-
দিনরাত;
আঁকছি তোমার সুন্দর ঠোঁট- প্রিয় চোখ,
অস্পৃশ্য এক মুখ
কার্টিজ পেপারে নয়- পেন্সিলে নয়
হৃদয় থেকে হৃদয়ে;
কি হবে? ছবি এঁকে- বাস্তবতাহীন- অর্থহীন
পোর্ট্রেট এঁকে?
মানিয়া, আমি শিল্পী হতে চাই না-
আমি প্রেমিক হতে চাই।
কাব্যগ্রন্থঃ আকাশের স্টাফ নোটেশান(২০০০)
নিয়তি তুমি নিজের নও
ভাবালুতার কাল্পনিক অন্ধকারের,
তখন আমাদের আবার ফিরে যেতে হয়-
উড়ন্ত ঘোড়ার রথে চড়ে দশহাজার বছরের সম্ভাবনায়;
চাঁদের অন্ধকার দিক কিংবা সেখানে কি রামগরুদের ছানার বসবাস?
সব নদীতে বিসর্জন দিয়ে, একা একা নির্জনে চাঁদকে একটা সবুজ পনির ভাবতে-
মন্দ নয়তো!
এটা নিয়ে কি সুকুমার রায় কোন ছড়া লিখেছিল?
মনে আছে?
মানিয়া
তোমার নরম সুন্দর মুখশ্রী
আমার হৃদয়ের ব্যাথা হয়ে
ফিরে আসে একটি স্বপ্নে;
তুমি যেন অনেক আগের চেনা,
সেই এক হাজার বছর আগের;
যখন এদেশে কোন বিদেশী আসেনি
আমি ঘুরে বেড়াতাম বাঁশি হাতে বৃন্দাবনে-
তুমি খোলা শরীরে চুল এলিয়ে চাঁদ দেখতে…
ওসব ইতিহাস আর মনে আনতে চাইনা
আমি তোমার পোর্ট্রেট আঁকবো না
মানিয়া, তুমি এখন ক্লিওপেট্রা,
কেউ কিং সিজার- কেউবা ক্রীতদাস;
আর, আমি নির্জীব বেকার;
সবাই মেলে দিচ্ছে
স্ব স্ব ক্ষমতা, মৌনতা,
উজাড় করছে পৌরুষ;
আমি ইজেল নিয়ে বসে আছি-
দিনরাত;
আঁকছি তোমার সুন্দর ঠোঁট- প্রিয় চোখ,
অস্পৃশ্য এক মুখ
কার্টিজ পেপারে নয়- পেন্সিলে নয়
হৃদয় থেকে হৃদয়ে;
কি হবে? ছবি এঁকে- বাস্তবতাহীন- অর্থহীন
পোর্ট্রেট এঁকে?
মানিয়া, আমি শিল্পী হতে চাই না-
আমি প্রেমিক হতে চাই।
কাব্যগ্রন্থঃ আকাশের স্টাফ নোটেশান(২০০০)
দুঃখের ফসিল
তবুও শান্তি আসবেনা আমার হৃদয় গহিনে,
কারণ আমি যৌবনটা হারিয়েছি চোরাবালির ফাঁদে
আর সেই চোরাবালিতে এখনও লুকিয়ে আছে আমার-
দুঃখের ফসিল!
ধর্ম হচ্ছে নদীর মতন
নদি যেমন ধীরে ধীরে নাব্যতা হারায়,
ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোও-
বিশাল, বিশাল স্থাপত্য নিয়ে ধীরে ধীরে অর্থহীন হয়ে পড়ে
সিজার হয়ে বেঁচে ছিলাম
ততো বার ভাবি
সিজারের জীবন যেন
নিজের প্রতিচ্ছবি,
ছাব্বিশ বার ছুড়ির আঘাত
শেষের তম ব্রুটাস-
হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারি
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস;
সিজার নিয়ে এতো ছবি
দেখি ভুরি ভুরি-
তবু কেন মনের নেশা
যায় নি এক কড়ি!
তাহলে কি পূর্ণজন্ম
সত্যি হোল এবার
সিজার হয়ে বেঁচে ছিলাম
দুনিয়াতে আরেকবার!
একটি বিকেল- রেস্তোরাঁ ও গনতন্ত্র
সবকিছু ছেড়ে হঠাৎ রেস্তোরাঁয় যেতে ইচ্ছে করে
বিশালকায় একটা রেস্তোরাঁর এক কোণে জানালায়
শহুরে সারমর্ম চোখে পড়ে সিলিং ফ্যানের ঝড়ো বাতাসে
লাল জামার বয়কে অর্ডার দেবো “এক কাপ চা”
ঘন দুধ মিশিয়ে স্পেশাল কিছু, নাহ আগে ঐ “শিক্ কাবাব”
তার গন্ধ বয়ে আসছে ধোঁয়ার ডানায় হোটেলের এক কোণে
তারপর রঙিন একটা খবরের কাগজে
রসালো সব খবর ফেলে সোজা খেলার পাতায়
“শচিন কতো রান করেছে কতো বলে”?
ইংল্যান্ডের অবস্থা এখন কেমন?
ওহ্ দুটো বিদেশী সিগ্রেট দাওতো”
খাওয়ার ঘ্রাণে হোটেলে ধোঁয়ার টানে কি যে সুখ
আচ্ছা আর্সেনাল কিভাবে জিতলো ইন্টারের সাথে?
জিদান এখন কোন্ ক্লাবে? কিংবা জামারানো?
কতো সুখের ছায়ায় ভাবি একটা রেস্তোরাঁর কথা
আসলে এর চেয়ে কি সুখ এই দেশে আছে?
নিগুঢ়তা ফেলে স্থুলতা এড়িয়ে একটু হালকা কিছু
ধরো রেস্তোরাঁটা একটা পৃথিবী
টেবিলগুলো একেকটা দেশ
বেয়ারাগুলো একেকটা পলিটিশিয়ান
আমি যে কোনো একটি দেশের প্রেসিডেন্ট
সিগ্রেটটি একটি “থ্রি টু পিস্তল”
আমি গুলি ছুঁড়ছি শূন্যে স্বাধীনভাবে
কেউ হতাহত হল না অথচ সবাই স্বাধীন।
কাব্যগ্রন্থঃ চিরহরিৎ মানুষ(প্রথম প্রকাশঃ ২০০২)
কবিতা দিয়ে বিশ্লেষণ
কবিতা দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে আমাকে
শব্দ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে আমার প্রতিটা সেকেন্ড
লাইন দিয়ে ভাগ করতে হবে জীবনের প্রতিটা দশক
আত্মগ্লানি, অপরাধবোধ আর ব্যর্থতার আঠায় থেতো করে বানাবো
এক গ্লাস কবিতার রস
আত্মোপলব্ধি, অভিজ্ঞতা আর বিরত্তের নুড়ি দিয়ে বানাবো
এক বস্তা কবিতার সিমেন্ট
এবার শুধু রঙ মাখো কবিতার মুখে
গান শোনো পাতা ছড়িয়ে
এরপর হাওয়া এসে উপস্থিত
দর্শকরাও সব ফেরেস্তা
স্বর্গালোকে ঈশ্বর এসে
নিজেই কবিতা হলেন!
কাব্যগ্রন্থঃ চিরহরিৎ মানুষ(২০০২)
কবি তুমি পবিত্রতার প্রেতাত্মা
কবি তুমি পবিত্রতার প্রেতাত্মা
তুমি ঐশ্বরিক ইচ্ছের প্রতিফলন
সবুজ ঘাসের পাঠশালার প্রজাপতি
হেঁটে যাওয়া পথের অচেনা পথিক
আসন্ন বৃষ্টির সংকেত দাতা
অসময়ের গানের গীতিকার
অনাগত ধর্মের বার্তা বাহক
হতাশা থেকে মৌনতার পথে
যেখানে অসংখ্য সুখ-
ছড়িয়ে আছে আনাচে কানাচে-
কেউই জানেনা-
শুধু কবি জানে!
১২ই ডিসেম্বর, ২০১৪
সভ্যতার অসভ্যতা দমনের প্রক্রিয়া
পৃথিবীতে এসেছিলাম নিরবতার গান শুনতে-
চড়ুই, টুনটুনির সুরের ঐকতানে যে পথে সোনালু ফুল ঝরে- টুপটাপ
সেখানেই হেঁটে যাবো চিরকাল-
কিন্তু বাধ সাধল সভ্যতা-
সে আমাকে শুধু তাড়িয়েই নিয়ে গেলো অসভ্যতার ভেতর-
উবিয়ে দিয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষের অস্তিত্ব
হ্যাঁ, মেনে নিতে আপত্তি নেই যে সভ্যতা অনেক কাজের
আবার এটাও বলতে হয়- অকাজেরও বটে!
তবে এটাও সত্য যে আমরাই আবার নিজেদের ছেঁকে নিতে পারি সভ্যতার প্যাচকল থেকে-
যদি প্রতিদিন সকালটা শুরু করি অতিপ্রাকৃত চেতনা দিয়ে- আর সেভাবেই ইতি টানি প্রতিদিন
তাতে সভ্যতার ব্যাপারে যতোটা উৎসাহ বাড়বে-
আবার গণ্ডার তুল্য পুরু চামড়া জড়িয়ে ঠেঙ্গানোও যাবে সভ্যতার অসভ্যতাকে!
০৮/১২/২০১৪
মানুষ হবার কৌশল
বিকট শব্দে কাছে কোথাও ট্রান্সফরমার বাস্ট!
আমি ভাবছি হয়তো একটি কাকের আত্তহুতি!
ব্যর্থ প্রেমিকের জীবনাবসান ঘটলো ট্রান্সফরমারে পা ঢুকিয়ে!
কিন্তু কাক মানুষ না-
তারা এতো জটিলও না-
তাদের জীবন জটিলতা হীন-
তারা পরিপূর্ণ!
অর্থাৎ একটি কাক = জন্মগত ভাবে একটি পরিপূর্ণ কাক,
কিন্তু মানুষ জন্মগত ভাবে পরিপূর্ণ নয়-
মানুষকে ভাবাবেগ উৎরিয়ে পরিপূর্ণ হতে হয়-
মানুষের ভাবাবেগ- জটিলতা থাকবেই, শুধু যখন প্রয়োজন পড়বে-
অর্থাৎ মোবাইল ফোনের মতন-
যখনই প্রয়োজন পড়বে শুধু তখনই মানুষ কথা বলবে, শুনবে-
এর বাইরে এক চিলতেও নয়!
১০/১২/২০১৪
মৃত্যু তুমি অনাগত কবিতার ভুমিকা
মৃত্যু তুমি উদযাপনের,
তুমি আনন্দের,
তুমি দুঃখ বিভ্রাট,
তুমি মৌনতার উল্লাস,
একটি কবিতার সমাপ্তি,
আলোর পথে উত্তরন,
আকাশী চিলের স্বপ্ন,
কঙ্কটবিহীন গোলাপের হাতছানি,
মৃত্যু তুমি পিয়ানোর ‘প্রেলুড’
মৃত্যু তুমি অনাগত কবিতার ভুমিকা
০৬/১২/২০১৪
কিছু মানুষ
আর কিছু মানুষ -অবিনীত ভাবে বিনীত
তবে “বিনীত ভাবে অবিনীতরা-ই” চরম অহংকারী-
এবং বিখ্যাত হওয়ার বাসনায় হায়ানার মতই উদগ্রীব
তুমি আমার কখনও স্বপ্ন ছিলেনা
তুমি আমার কখনও স্বপ্ন ছিলেনা
বার বার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার বৈরীতায়
তোমাকে স্বপ্ন বানানোয় সচেষ্ট হয়েছিলাম
স্টেরয়েড মাখানো দেহ বিলাশ!
তাই গত দু’দশক তুমুল যুদ্ধ ঘটেছে –
দেহবাদি আর মনবাদিদের মাঝে,
আস্তে আস্তে পৃথিবীর উত্তাপ বাড়লেও
দেহের উত্তাপ বাড়েনি বরং কমেছে
হিমাঙ্কের নিচে বাস্তবতার সাত মাইল নিচে
আর মন তো এখন স্বয়ং সূর্য
সে মনের আনন্দেই জলছে!
০৪/১২/২০১৪
কি দারুন মাটির গন্ধ
অনেক হল
মানুষ হতে গিয়ে
মাটির গন্ধ শুকে, মানবিক উর্বরতায় কেটেছে যার শৈশব-
যে কিনা রঙের বৈষম্য শিখেছে আনমনে হরেক রকম কোমল পাতা ঘষে ঘষে
বালির বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে যে রপ্ত করেছে জোয়ারভাটার হিসেব নিকেশ
চলন্ত গাড়ীর ভেতর থেকে চাঁদ দেখে বুঝতে শিখেছে-
কেন চাঁদ স্থির থাকে যদিও- চাকা ঘুরছে অনবরত!
আরও কতকি? পৃথিবীটা গোল, মেঘ থেকে মানুষের অবয়ব-
খুঁজে এনে দ্বৈত জগত সৃষ্টি করা-
কিন্তু সবই জঞ্জালে গেলো যখন তাকে কোমল মণ্ডে পরিবর্তিত করা হল শিক্ষাদানের নামে-
তারপর হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট, চারিদিকে অন্ধকার-
কোটি কোটি মণ্ডের মাঝে কিছুতো উচ্ছিষ্ট নোংরা হবেই-
মানুষ তৈরির কারখানায়, খামখেয়ালিপনায়!
এবার একটি প্রতিষ্ঠিত মণ্ড যে কিনা ধীরে ধীরে একজন সফল রোবটে রুপান্তরিত হল-
সে আমাকে শাসিয়ে গেলো কীরে মানুষ কেন হলিনা এই জনমে?
আমি তাকে উত্তর দিলেম- অনেক হল-
মানুষ(রোবট) হতে গিয়ে
যখন ব্যর্থ হলাম
তাই এখন কুকুর হয়ে বাকী জীবন পার করিয়ে দেবার সপ্ন
শক্ত জোড়া নাকের ওপর ভর করে শুধু শ্বাসপ্রশ্বাসে থাকবো
আর ঘ্রান নিবো
আহ্ কি দারুন মাটির গন্ধ!
০৫/১২/২০১৪
আবার আমি ফিরবো আমার গৃহে
ভাষা আর অস্তিত্তের প্রেতাত্মা বেশে
লম্বা ঘাসে বসে দুলছে যে প্রজাপতি
সে এখনও অপেক্ষারত বিয়ের শাড়ীতে বর্ণিল পাখনায়
মৌনতা কাকে বলে
তবে নিজের এই খোলসটাকে-
স্টেনগানের খোলসের মতন-
ঝাঁঝরে রুপান্তরিত করতাম,
আর দেখিয়ে দিতাম
মৌনতা কাকে বলে!
দেহের ছবি আঁকতে গিয়ে
দেহের ছবি আঁকতে গিয়ে
কেটে গেছে সময়,
মনের ছবি আঁকবো কবে?
বলতে লাগে ভয়;
আকাশ জুড়ে রঙ জমেছে
হালকা, গাড়, ক্ষয়,
যাবো তবে মেঘের দেশে-
উড়তে লাগে ভয়;
ঘুড়ি হয়ে উড়ছি এবার
আকাশ থেকে দেখা,
দুনিয়াটা মস্ত বড়
ক্ষীণ সুতোর রেখা!
০১/১২/২০১৪
ধ্যান
যে মানুষ নিঃশ্বাসের প্রেমে আসক্ত,
পারিপার্শ্বিকতার প্রেমে মগ্ন
এবং সমস্ত জগতকেই নিজের অস্তিত্তের অবিচ্ছিন্ন অংশ ভাবে
সেই মানুষ ধ্যানী হতে বাধ্য
*****
ধ্যানে মগ্ন হওয়া মানে-
পুরো জগতকে উপলব্ধি করা-
আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত পথ চলা,
ধ্যানে মগ্ন থাকা মানে-
পুরো জীবনের নীরব সমাধান-
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ধরনের সুখ-দুঃখের-
পরমানন্দময় ঐকতান
*****
যে মানুষ প্রকৃত ধ্যানি
নিজ গুনে জ্ঞানী,
তার ধর্মানুশাসন শিখতে হয়না
কারণ ধ্যানরত অবস্থায় সে বুঝতে পারে-
কোনটি ভালো অথবা মন্দ-
অভিলাষের তো প্রশ্নই আসেনা
*****
০১/১২/২০১৪
অমানুষ হওয়ার কথা কখনও ভাবিনি
অথচ, এই আমাকেই অমানুষত্তের সাধ নিতে হল
ভালোবাসার বাইরে জগতকে কখনও ভাবিনি
অথচ অনাকাঙ্খিত ঘৃণার বিদ্বেষে জলে পুড়তে হল নিজেকে
আকাশটাকে বাদ দিয়ে সংসার করবো, কখনও ভাবিনি
অথচ, এখন আমি বসে আছি ইট-পাথরের আবদ্ধ গৃহে
এইযে কবিতাটা লিখছি, এটা হচ্ছে একমাত্র বিদ্রোহ
যা হয়তো আমার মতন কাপুরুষদের কিছুটা অপবাদ মুক্ত করতে সক্ষম
এই তীর নিক্ষিপ্ত জীবনে!
যেতে দাও
যেতে দাও
ঘটনা থেকে ঘটনায়,
আটকিয়ে রেখে লাভ নেই-
সালোকসংশ্লেষণে থাকুক বৃক্ষের মতন,
মনে রেখো, তুমি ইহকাল ত্যাগ করলেও-
সবই চলবে পরেরদিন,
গাড়ীর চাকা ঘুরবে-
সঙ্গে পৃথিবীও
২৯/১১/২০১৪
মৃত্যু
দ্বিতীয় পদক্ষেপ
পারিপার্শ্বিক সঙ্কুচিত হচ্ছে
ধীরে ধীরে সহজ চেতনায়
ওজন বেড়ে চলছে সততার, পুন্যতার
যেরকম ছায়াপথের মাঝে কৃষ্ণ গহবর
সেরকম মহাত্মার মাঝে নিলাভ আত্মা
আমিত্বের প্রচার বিমুখ আত্মপ্রতিকৃতি দেখছি-
শূন্য থেকে
ত্রিমাত্রিক নিলাভ ঝলকানি!
এই ঝলকানিই অমরত্বের সন্তুষ্টি-
অর্থাৎ ‘মৃত্যু’
খামকেয়ালিপনায় গ্রন্থিতে শয়তান যোগ
কখন, কেন, কি হল জানিনা
সহজাত প্রক্রিয়ায় হঠাৎ আবিষ্কার হল
অসুখ!
কিভাবে হারাল সুখ?
সবিই তো ভালোই চলছিলো–
– সাইকেলের প্যাডেল, চাকা, ব্রেক
ওহ্, মানুষটা কোথায়?
কোন্ মানুষটা?
আরে সব কথা কি ভেঙ্গে বলা যায়–
– যে সাইকেল চালাত?
ওহ্ হো, সেতো ক্যাবল একদিকেই চেয়ে থাকে-
না হয় বিছানায় গড়াগড়ি খায়-
সারা আকাশের দুঃখ নিয়ে!
অনিষ্টটা কেমনে ঘটলো?
অতি উৎসাহী সাইক্লিস্ট!
আরে ওসব কিছুই না-
অনেক বছর পরে বোঝা গেলো
খামখেয়ালিপনায় গ্রন্থিতে অনিষ্ট যোগ(শয়তান)
শয়তান কেন এত বছর পরে?
আরে ওটাই শয়তান ছিলো।
২৭/১১/২০১৪
যদি ভুলতে পারো এই নশ্বর দেহ
আর দুঃখ হচ্ছে অমরত্তের পথ্য-
সুখ হচ্ছে অমরত্তের স্পৃহা,
ধরে নাও তুমি অমর হবে-
যদি ভুলতে পারো এই নশ্বর দেহ!
দুঃখ করার কিছু নেই
দুঃখ করার কিছু নেই
কারণ দুঃখের অনুভূতিটা শুধুই মানুষের
আমার এই বিশাল মস্তিষ্ক দিয়ে দুঃখ অনুভব করছি-
কতো অসাধারণ ব্যাপার!
একবার ভেবে দেখ, কুকুর হয়ে জন্মলাভ করলে-
এই কল্পনাতিত, ব্যাক্ষাতিত অনুভূতিটা অনুভূত হত?
২৫/১১/২০১৪
প্রানে আবার প্রান এলো
একঘেয়ে জীবনে
জানালায় যখন একটি চড়ুই এসে বসে-
তাকে কিছু চাল দিলেম-
বৃষ্টি এলে সে নেচে গেয়ে খেয়ে-
উড়াল দিলো-
আমার ধর্ম পূর্ণ হোল
প্রানে আবার প্রান এলো!
২২/১১/২০১৪
আশাহীন মানুষ
আশাহীন মানুষের – আশাহীন স্বপ্ন
আশাহীন সুর – আশাহীন রোদ্দুর
আশাহীন পথচলা – আশাহীন নিরাশা!
সুখ বলতে – ঐ কিছু মৃদু তৃপ্তি –
ইলিশ মাছের ঝোল যেন –
বর্ষার বাঁধ ভাঙ্গা জল –
যখন একদল কিশোরকিশোরী –
মেতে উঠত জলকেলি খেলায় –
অদৃশ্য আনন্দে – অনাবিষ্কৃত শিশ্ন !-
আজ এই মাঝ বয়সের পরম প্রশান্তি!
২৩/১১/২০১৪
ভালোবাসা মুক্ত পাখি
দেহহীন, মনহীন,
অস্তিত্ব যার আকাশ মুখি,
আমি আর তুমি-
খাঁচায় বন্দি করতে চেয়েছিলাম-
প্রেমময় সোনার খাঁচায়!
অথচ সেই খাঁচা আজ পরিত্যাক্ত-
পড়ে আছে আমাদের স্বপ্নের আঙিনায়,
একদিন শেষ বিকেলে-
আমাদের আবার দেখাদেখি-
এবার মুখোমুখি মৌনতায়-
আমরাও জীবন দিয়ে শিখেনিলাম
ভালোবাসার মানে কি?
ভালোবাসা ভাষাহীন
ভালোবাসা স্বপ্নহীন,
আকারহীন, আশাহীন, অব্যাক্তিগত,
সূর্য যেমন তোমার, আমার, সবার,
ভালোবাসাও আমাদের মাঝে-
অথবা আমরা সবাই ভালবাসার বস্তু,
শুধু মানুষ কেন?
এই পর্বতরাজি, বৃক্ষরাজি, এই বিশ্বজগত,
জাগিয়ে তুলনা একবার-
শুধু ভালোবাসা-ময় স্বপ্ন!
অসংখ্য তুমি আমি
জীবনের সামনে তুমি কিছু নও
তোমার সামনে আমিও শূন্য
চলো আমরা অসংখ্য জগত সৃষ্টি করি
সাথে অসংখ্য সুখ!
অসংখ্য তুমি, আমি
পৃথিবীর সব রঙ ঝরে পড়ে একদিন মৃত্যুঞ্জয়ীর ঠিকানায়
পৃথিবীর সব সুখ আর কাল্পনিক দুঃখ মিলেমিশে একাকার,
বিজ্রিত-বাদ্রো, মেরেলিন-মনরো, সব ফ্যান্টাসি
অথবা ভ্যান-গগের দুঃখ মাখা অবশ্যম্ভাবী চিত্র জগত,
সবই আসলে টালমাটাল মৃত্যুঞ্জয়ী পরমানন্দময় হাওয়ায়
বাসার মূল্যবান চাবি, দামি দামি গহনা
কিচ্ছু নয় বন্ধু, মিথ্যে আশ্বাসের প্রেতাত্মা
মৃত্যুঞ্জয়ীর ধুলো মাখো বন্ধু সময় থাকতে
দেখবে তুমিও একদিন মৃত্যুঞ্জয়ী হবে
ইজেলের ওপর রঙ মাখানো ইঙ্কমপ্লিট সকালে।।
পাণ্ডুলিপির শেষের পাতায়
পাণ্ডুলিপির শেষের পাতায়
আপাতত কোনো সুমাপ্তি নেই
কোনো সমাধান নেই
আত্ম উপলব্ধির জটিল প্যাঁচে
জড়িয়ে গেছে কাব্য সৃষ্টির মর্ম
হও যদি তুমি বুদ্ধিমান
ঢুকতে পারো এই “পাণ্ডু” পিরামিডের ভেতর
শব্দের সাথে আলাপচারিতায় বুঝবে
কাব্য-অকাব্যিকতায় কতো দুঃখ ছিলো
ঝড় বৃষ্টির নিঃশেষে শান্ত চাঁদের মতন
ঐ সৃষ্টিতে কতো শান্তি ঝরে
ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করো?
নয়তো তার ছোট বিবেককে
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে জানতে পারো
কে কতো বিশুদ্ধ কবিতা লিখলো!
১৭/১১/২০১৪
প্রেমের কার্নিভাল
খুলে দিলাম সবকটা জানালা
নশ্বর এই দেহের,
যাতে প্রেমের কার্নিভাল উৎসবে মেতে উঠি
লজ্জাহীন, দিগম্বর হয়ে,
আর মিশে যাই
সর্বময়!
১৮/১১/২০১৪
কেউ-না-কেউ তোমাকে সাড়া দেবেই
হতাশ হওয়ার কিছু নেই,
কারণ এখনও তোমার মাথার ওপর সূর্য ওঠে।
চাঁদের আলোয় আলোকিত খোলা আকাশের নীচে হাত-পা ছড়িয়ে দাও।
দ্যাখো, তোমার আকাশে অফুরন্ত স্বর্গ, গ্যালাক্সি, আলোর পরে আলোর হাতছানি।
আর তুমি যে পৃথিবীর ঘাসের ওপর গা এলিয়ে দিয়েছ, সেখানেও আছে প্রায় দু’শর কাছাকাছি দেশ,
সাইবার বিশ্ব,
কল্পনা আর বাস্তবের মিলনমেলা,
সাতশ কোটি মানুষ!
তাদের লক্ষ লক্ষ ঘর!
দরজায় কড়া নেড়ে দ্যাখো- না?
দেখবে, কেউ-না-কেউ তোমাকে সাড়া দেবেই।
তিনটি দশক
চেয়েছিলাম শুধুই আনন্দময় উপস্থিতি হতে
কিন্তু হয়ে গেলাম ‘আমি’!
এই ‘আমিত্ব’ ঘোচাতেই কেটে গেল
তিনটি দশক!
১৬/১১/২০১৪
প্রাসঙ্গিক আর অপ্রাসঙ্গিক
প্রাসঙ্গিক চিন্তার বাইরে
জীবন গড়ার কখনও পক্ষপাতি ছিলাম না।
কিন্তু হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক একটা কিছু
যখন নিংড়ে ফেললো চিন্তার সারবস্তু,
তখন প্রাসঙ্গিক ভাবে হলেও
শিখতে হোল কবিতা লেখা।
কবিতার দুঃখ, উত্তাপ বুঝতে গিয়েও-
প্রাসঙ্গিক ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলাম অপ্রাসঙ্গিকতায়।
রেলপথ থেকে ছিটকে
যখন রসহীন উপন্যাসের চরিত্র হলাম,
তখন কবিতা আবার প্রাসঙ্গিক মনে হল।
এবার জগতটা ছুঁয়ে দেখলাম সপ্তম ইন্দ্রিয় দিয়ে!
সপ্তম ইন্দ্রিয় মানে?
প্রজ্ঞা দিয়ে ছুঁয়ে দেখা ত্রিমাত্রিক সপ্ন!
এর পরে ঐ নীল জগতের সবকিছুই
প্রাসঙ্গিক মনে হল।
১৩/১১/২০১৪
একদিন শুক্রবার
একদিন শুক্রবার
আমার একমাত্র সন্তান
বাসায় নেই, মায়ের সাথে নানার বাড়ি।
যাবার বেলায় তার আনন্দের শেষ নেই,
তাই তার ডাইনোসর, হরেক রকম প্রানি আর গাড়িঘোড়ার খেলনাগুলো
এলোমেলো করে রেখেছে পুরো ঘরের মেঝেতে।
আমি হঠাৎ অন্য মানুষ-
আবার অনুপ্রাণিত হলাম,
জানালার সূর্যের আলো আড়াআড়িভাবে ঝুঁকে,
ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে দিলো হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে খুঁজতে।
এবার আমি গভীর মনোযোগে খেলায় মেতে উঠলাম-
নানারকম বন্য প্রাণীদের মাঝে আমার উইলি-জীপ খানা চলছে-
কেনিয়ার একটা বিশাল অভয়ারণ্যের ভেতর—- ।
আস্তে আস্তে রোদ হেলে পড়ে—-
কলিং বেল বেজে উঠে—
আমি দরজা খুলেই বুঝলাম,
এতক্ষন ছত্রিশ বছর আগের
‘টাইম-মেশিনের’ ভেতরেই ছিলাম——
আমার সন্তান আমাকে শাসিয়ে বললো-
“তুমি আর কক্ষনো আমার খেলনা ধরবে না!”
তারপর আবার আমি দৈনন্দিন জগতের দুঃখের সাগরে
নিষ্পেষিত হলাম!
১৪/১১/২০১৪
স্মৃতির বিন্দুতে মিশে যাওয়া রেললাইন
দুদিকেই পাহাড়, ছোট ছোট কুঁড়েতে মানুষের বসবাস;
অসাধারণ বিকেলের নরম রোদ্দুরে হারিয়ে যায় যে কিশোর,
সে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হল পুরো সৌন্দর্য থেকে।
হ্যাঁ, হয়তো ভ্যানগগের ছবি মুগ্ধ করেছে তাকে বার বার,
কিন্তু সে আর প্রকৃতির ছোঁয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি সহজাতভাবে।
অথচ জীবন চলছে নদীর মতন, মুগ্ধতায়,
শেষবিকেলের ঠিক আগেই তার শুকনো ঠোঁটে কিছু মৃদু তৃপ্তি।
অপেক্ষারত সেই প্রাগৈতিহাসিক নিম গাছের ডালে-
এখনো সে অপেক্ষারত একটা রেলগাড়ি আসবে, এই প্রাচীন জনপদ ধরে
রেললাইন উবে গেছে কবে, অথচ সে এখনও বসে আছে পাখি হয়ে।
মৃত্যুর সাথে বন্ধুতা
মৃত্যুর সাথে বন্ধুততা
শহুরে গুহামানব!
ঘৃণা আর হিংস্রতার ছুরি
সদাই জাগ্রত জানালার কোণে
সময়ের প্রয়োজনে কেউ কেউ আসে
অসময়ের কুকুরছানারা আর আসে না।
রবাহূত বলতে কিছু পুরোনো স্মৃতি,
যাদের ওজন পৃথিবীর ভরেরও বেশী!
চল্লিশাের্ধ মানুষটার যোগাযোগ মহাকাশের সাথে-
২৪ ঘণ্টা সালোকসংশ্লেষণ চলছে অনবরত!
১২/১১/২০১৪
পাগলখানার দরজা খোলা
ছিলাম আমি একা
অন্ধকারে ভুলবশত
পাগলা রাজার দেখা।
এক দেখাতেই জীবনযাপন
হল এলোমেলো,
ক্লাসের পড়া, মাঠের খেলা
এক্কেবারেই গেলো !
রাত জুড়িয়ে পায়চারী
শূন্য ঘুমের গাড়ি
শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকি
কিবা করতে পারি?
শূন্যে গেলো বয়স বুঝি
হলাম পরজীবী
শত শত ছড়া লিখে
হলাম বুদ্ধিজীবী!
জীবনের শেষ তেরো বছর
খাতা-কলম নিয়ে বসলেই সব হিসেব মিলে যায় মুহূর্তে।
আমার সেই বোন, যে আমার অগ্রজা, হারিয়েছে জীবন আগেভাগেই,
তাকেও তো শেষ বিদেয় দেয়া হল না, মাঝবয়সে।
আজ সাঁঝবয়সে বিষাদের চাঁদ যখন একমাত্র নীরব সাক্ষী,
তখন তাকে না হয় বলে ফেলি নিরব কথাগুলি!
বাতাসে বাতাসে, আনাচে কানাচে ছড়িয়েছে যে- দুঃখ,
যার কুলকিনারা মেলেনি কারো চোখে,
আমাদের কৈশোর দেখে যাদের চোখ জুড়িয়েছে!
আমি ধন্য
এই মুহূর্তে আমি চরম ধন্য
আমি নেশাক্ত মুহূর্তের সাথে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত পারিপার্শ্বিকতার সাথে
হৃদ্স্পন্দনে সংযুক্ত স্রষ্টার সাথে
এই নেড়ি গলির শেষ প্রান্তের একটি বাসায় বসে
আমি পৃথিবীকে অনুধাবন করছি
মহাবিশ্বের, মহাশূন্যের ছবি এঁকে
লক্ষ লক্ষ গ্রহানুর উপস্থিতি ভেবে
আমি এই ক্ষুদে সৌরজগতের
নগণ্য একটা গ্রহ পৃথিবীর বুকে
এশিয়া মহাদেশের পুঁচকি
ঘনবসতিপূর্ণ, সমস্যা বহুল
একটি দেশ- বাংলাদেশের
রাজধানী ঢাকা শহরের
অবহেলিত জনপদ তালতলার
পানির টান্কির পাশ ঘেঁষা
কানা গলি ‘কোনাকুনি- মিলানোর’
একটি বিল্ডিং এর পঞ্চম ফ্ল্যাটের
ড্রয়িং রুমে বসে
সবাইকে সাধুবাদ জানাচ্ছি—
হে বন্ধুরা, হে জনগণ
হে হারিয়ে যাওয়া আত্মারা
আমি খুব ভাল আছি
কারণ আমি অতীত নিয়ে বাঁচি না
আমি মুহূর্ত নিয়ে বাঁচি
মুহূর্ত আমার জন্য অনেক অনেক বাস্তব
আমার হৃদয়ে মিথ্যে নেই
আমি সত্য দিয়ে বাঁচি
আমি বিশ্বাস করি, এখনও
পৃথিবীতে সবুজ ঘাসের আধিপত্য
মানুষের অহং এর চাইতে অনেক বেশী
এখনও সূর্য ওঠে, অস্ত যায়
আড়াইহাজার বছর আগে
আয়োনিয়ন কোন-এক দার্শনিক
যেভাবে সূর্যকে দেখেছে
আমিও এখনও ঠিক সেরকম দেখছি
যদিও পৃথিবী হয়তো এখন কিছুটা ক্লান্ত
সে তার যৌবন হারিয়েছে
হারিয়েছে তার ওজন
পৃথিবীর বুকে এখনও জাহাজ ঘুরে
যদিও পালতোলা জাহাজ হয়তো আর নেই
নেই জেম্স-কুকের মতন
নির্ভীক নাবিক, যারা ছুটবে
একটি মহাদেশ আবিষ্কারের নেশায়
আমি জানি, পৃথিবী আজ বিভক্ত
একটি দেশের সীমান্ত
এখন শুধু ভূমিতে সিমাবদ্ধ নয়
বরং তা সমুদ্রেও প্রযোজ্য
অবাক লাগে, আকাশেও সীমা আছে
তবুও আমি স্বাধীন
শত দুঃখ, বেদনা, ব্যর্থতা
হিংস্রতা, অনিশ্চয়তা, অসততা
আমাকে একচিলতেও টলাতে পারেনি
আমি এখনও দাঁড়িয়ে আছি
স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মতন
এই পৃথিবীর বুকে—-
শাসিয়ে যাচ্ছি আমার দাপট
আমি শাসন করি মুহূর্ত দিয়ে,
মস্তিস্ক দিয়ে, আমার সর্বইন্দ্রিয় দিয়ে
তাই তেলাপোকারা কেউ আজও
আমার ঘর পুরোপুরি দখল করতে সমর্থ হয়নি
পিঁপড়েরাও পারেনি
টিকটিকিরা এখনও ছাদের ওপর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
মাঝে, মাঝে ডিম পেড়ে যায় আমার অধিকারের আনাচে কানাচে
তা সত্ত্বেও আমি তাদের জন্য তেমন কোনো
প্রতিরোধক কীটনাশক ব্যবহারে অতোটা আগ্রহি নই
ক্যাজুয়েলিটি বলতে, মাঝে মাঝে কয়েকটি তেলাপোকার প্রাণ বিসর্জন,
ঘটনাগুলো ঘটে আমারই স্যান্ডেলের চাপায়
পিঁপড়েরা তো আছেই, তাদের জন্যও আমার খুব দুঃখ হয়
কিন্তু কিছু করার নেই
আমি অনুতপ্ত, ভীষণ অনুতপ্ত
আমি অনুতপ্ত কারণ এই আমিই মাঝে মাঝে আমার টেম্পারমেন্ট হারিয়েছি
হারিয়েছি মুহূর্তকে
তাই বলে আমার অনুতপ্ততা কোনো কীটহত্যার জন্য নয়
অথবা কাউকে আনমনে দুঃখ দেয়ার জন্যও নয়
আমি অনুতপ্ত, কারণ আমি আমার মূল্যবান মুহূর্তের সদ্বব্যবহার করিনি
তাই আমার কাছে মুহূর্ত ও জীবন প্রায় একই বিষয়
সময় ভেদে মুহূর্ত প্রাণকেও ছাড়িয়ে যায়
তাই আমার কোন হা- হুতাশ নেই
তাই আমি মৃত্যুঞ্জয়ী
মৃত্যুকে আমি আনন্দে বরণ করতে আগ্রহী
আমি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষারত
অপেক্ষায় থাকবো না- আসা পর্যন্ত,
আমি সুন্দর একটি প্রান্ত চাই- সুন্দর পরিনতি- অবশ্যম্ভাবী সমাপ্তি
আমার সত্য নিয়তি
মৃত্যুকে সামনে রেখে বলছি
আমি সত্য পথের মানুষ
আমি সত্য দিয়ে নিয়তিকে
বরণ করতে প্রস্তুত ।।
ভালোবাসাকে অনুভব করবে বলে
তুমি কি কখনো বৃষ্টি নামতে দেখেছো?
আকাশের ছায়াময় উৎসবে-
দুঃখরা যেভাবে ঝরে পড়ে অঝোর ধারায়!
তুমি কি কখনো বৃষ্টির উম্মাদনায় দুলেছ?
সহজাত নেশায়, পিতৃপরিচয়হিন উলঙ্গ শিশুর উচ্ছলতায়,
আকাশ থেকে পাওয়া পাপমোচনের সূত্র ভেবে?
তুমি কি কখনো নিজের মতো বৃষ্টিকে অনুভব করেছ?
নাগরিক দুর্ভোগের নির্মম বাস্তবতায়-
প্রকৃতি কতো প্রশান্ত, প্রশস্ত! উজাড় করে সবকিছু-
ঝাঁজরার মতো শুধু ভালোবাসাকে অনুভব করবে বলে!
০৮/১১/২০১৪
বাড়ন্ত দুনিয়ার বাড়ন্ত সম্ভাবনা
সব কথা বলা যাবেনা এক জীবনে
তাই আরেক জীবনের সম্ভাবনা বাড়ছে ধীরে ধীরে।
অথচ এই বাড়ন্ত সম্ভাবনাকে কতোভাবেই- না শাসিয়ে রেখেছে ইতিহাস!
যে- চালার নিচে বসে আমি এই বাড়ন্ত কথাগুলো লিখছি,
সেটিও হতে পারে বাড়ন্ত জীবনের আরেক ধরনের প্যাপিরেসিয় অস্তিত্ব;
যদি আমিই বাড়ন্ত হই, আমার দুঃখও বাড়ন্ত, তাহলে আমার সুখও বাড়ন্ত হতে বাধ্য।
আর শব্দের সাথে কুশলি-আলাপচারিতায় যে সাগরে পাল তুলেছি-
ভাষা ও অস্তিত্তের বাড়ন্ত সম্ভাবনায়
তাকে তুমি কি বলবে?
বাড়ন্ত দুনিয়ার বাড়ন্ত সম্ভাবনা!
০৫/১১/২০১৪
হে আমার প্রাগৈতিহাসিক অনিশ্চিত বন্ধু
কোথায় নিয়ে যাবে?
হে অনিশ্চিত পদযাত্রা,
নিয়ে চলো শূন্যে,
নিয়ে চলো সৌহার্দ্যে,
নিয়ে চলো অন্ধকারে,
অনর্থ যেখানে হাতছানি দেয় চিরকাল।
বৃষ্টি ভেজা নরম মাটির ঘর
দেবে যাবে জানি অনিশ্চিত পাতালপুরীতে,
পাহাড় ধসবে, পলি জমবে, হিমবাহ গড়াবে,
আরও- কত কি?
অভিশাপের কম্পনে কম্পিত নয় যার হৃদয়
তার কাছে অনিশ্চিত আকাশ,
অনিশ্চিত আকার,
অনিশ্চিত অন্ধকার
সবই নিশ্চিত
হে আমার
প্রাগৈতিহাসিক অনিশ্চিত বন্ধু!
০৬/১১/২০১৪
কবিতা আমার রাজ্য নয়
তবুও আমার দিনমজুরী চলে
দ্বিভাষিক রাজ্যের অন্তস্থলে।
ভাষা আমার অপ্রিয় প্রেমিকা
যা দিয়ে আমি বাস্তবতার-স্তন
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করি,
আর মানুষকে জানিয়ে দিই
আমার জন্ম তুচ্ছ-বাস্তবতার জন্য হয়নি
কিন্তু নিশ্চিত কোন কারণবসত
ঢেউয়ের ছন্দ ভেঙে ভেঙে এখানে এসে জুটেছি।
উপচে পড়ছে ভ্যানগগিয়ো হলদে সবুজ রঙ
দোদুল্যমান নারিকেল গাছের আধ্যাত্মিক পরিধি জুড়ে।
বেগুনী-নীলাভ ঝরো বাতাসও ঘুরে বেড়ায়
ছড়িয়ে দেয় সুখ রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সংখ্যালঘুদের আস্তানায়।
মসজিদ, মন্দির, টেম্পলের পদাঙ্কের পরও
এখনও অপেক্ষারত আমাদের অমলিন এক পৃথিবীর স্বপ্ন।
সাথে কিছু স্বপ্নচারীদের স্বপ্ন, যারা কেবল
কিলবিল করে স্বপ্নের-টিকটিকি হয়ে ডাইমেনশানবিহীন সর্বদিক।
মনুষ্য-লিপির বন্দি দশটি দিন
তুমি আমাকে একা রেখে
কোথায় আছো প্রিয়তমা?
আমাদের নিভৃত বাক্যালাপগুলি যেন
কেবল চুইয়ে চুইয়ে ঝরে পড়ে
স্বপ্নে দেখা শাশ্বত প্রেমকাননে!
যেখানে আমি আর তুমি
চিরকাল ঘুরে বেরিয়েছি
ভুলে যাওয়া ডানায় ভর করে।
পুন্যতা লাভ করুক আমাদের
এই মনুষ্য-লিপির বন্দি দশটি দিন,
আমরা যে জেগে আছি
কুয়াশাছন্ন এক পার্থিব স্বপ্নের ভিতর।
যা কেউ বুঝে না
শুধু এই আমি, তুমি ছাড়া।
নবপ্রজন্মের প্রথম গান
অক্ষিগোলকের গুহা থেকে গুহার অভ্যন্তরে,
সূর্য থেকে বামন-সূর্যের অস্থিমজ্জায়
আজ আমার নবজন্মের প্রথম গান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
নবপ্রজন্মের নব নব প্রচেষ্টার পক্ষ্যন্তরে,
আমিও হাত বাড়িয়ে দিই আগামীজন্মের আহ্নিক গতিবিধিতে।
আমার সকল উৎসাহ ঝিলিক মেরে মেরে,
ভেঙে ভেঙে চিরকুটে রূপান্তরিত হয় কেবল।
আজ আমার নবজন্মের নব নব গান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
যখন আমি তোমাকে দেখি
যখন আমি তোমাকে দেখি
তখন পৃথিবী হয়ে ওঠে অমলিন।
পৃথিবীর সকল সুর বেজে ওঠে একসাথে
মাথার ভিতরে, আমি হয়ে উঠি এক ঐশ্বরিক সিম্ফনি।
তোমার অপলক দূরে থাকাথাকি
আমাকে রপ্ত করতে বাধ্য করে
কেবল সময় ভাঙার কৌশলে আবদ্ধ হতে,
বিশ্বাস রাখতে কেবল ভালোবাসায়।
তাই আমি পাখি হয়ে ঘুরি ফিরি
ভ্যানগগের মাঠ সদৃশ তোমার উৎসাহে
যেখানে সময় থেকে যায় অমলিন।
২২/০৬/২০১৯
তোমার হাতে হাত রেখেই আমি শুনেছি হৃদয়ের কথা
শুনেছি হৃদয়ের কথা।
হাজার রাত্রির একাকী কথন
আর ভুলেছি সকল ব্যাথা।
আজ হৃদয় জুড়ে সূর্য উঠে,
আজ প্রাণের হাসি উথলে উঠে,
আজ তোমার সাথে আমার হবে
চির হৃদয়ের কথন।
চলো হৃদয়ের কথা শুনি তবে আজ
গড়ি তবে অমর বাঁধন।
বছরগুলো কেবল সংখ্যা মাত্র
পাতাঝরা কৈশোরের বিস্তৃত ইতিহাস।
ইতিহাসের শব্দ ঝরে টাপুর টুপুর
আমরাও হাতরিয়ে বেড়াই নুড়িপাথর
অসময়ে, শহুরে এপার্টমেন্টের কমিউনিটি ছাদে।
চাঁদ ওঠে আগেকার মতন, যখন আমরা
চড়ুইয়ের মতন ঘুরে বেড়াতাম দিগ্বিদিক।
আজ ঘুরি সমেত বারান্দায় তোমাকে পাওয়া,
তবুও পিকাসোর মতন কেউ একজন
সামনে চলে আসে সারাক্ষণ।
অন্তরঙ্গ মুহূর্ত অথবা অন্তরঙ্গ সময়
আজ সবাই যে যার দ্বারস্থে।
স্বর্গীয় বাতাসও যত্রতত্র
এলোমেলো স্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে টুকরো, টুকরো।
মিষ্টিমধুর জীবনযাপন অথবা
সিনেমার পর্দায় আত্মগোপন
আর হয়ে ওঠেনা …
বরং ক্রমশ চক্রাকার-বিলুপ্তিতে
আসক্ত হয়ে পড়ছি।
০২/০২/২০২০
জীবন হচ্ছে রঙচঙে এক ললিপপ
বরং সময়ের শ্বাসে শ্বাসে বুনতে হয় স্বপ্নকে।
জীবনের বেদনা অথবা পরমানন্দ হচ্ছে এই।
আর যতো কঠিনই না হোক জীবনের পথ,
আসলেই মানুষের কিছুই হারানোর নেই সে পথে।
জীবন হচ্ছে রঙচঙে এক ললিপপ,
উপভোগের সময় পেরিয়ে গেলেও
জীবন যেভাবে গজায়
তেমনি গজিয়ে ওঠে সেই ললিপপও।
আমার পৃথিবী কেবল ভালোবাসার
যা আমি বুনেছি তিলে তিলে
বুনো সভ্যতার মাঝে।
যেখানে নশ্বরগন প্রতারককেই
জ্ঞানী মনে করে,
অতি লোভী, লম্পটকেই
মহাপুরুষ মনে করে।
আর সক্রেটিসদের হত্যা করে চলে
যুগে, যুগে।
তাই আমার পৃথিবী কেবল
সক্রেটিস তুল্য অবিখ্যাত মানুষের।
যারা প্রচারবিমুখ অথচ
মায়াজগতে মৈত্রী ছড়িয়ে দিতে
কার্পণ্যবোধ করে না কখনো।
আমিত্বের বিসর্জন প্রক্রিয়া
আমি কতবার বললাম, আমার আমিত্বে আর আঁচর দিও না।
এটার অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে ইটখোলার আগুনে।
তুমি চাইলেও তোমার আদলে রূপান্তরিত করতে পার না তাকে।
প্রয়োজনে আমি আবার একা হবো তারপর না হয় “আমি”-কে বিসর্জন দেব।
১২/০৫/২০২০
পেরু দেশের সুর
পেরুর সুরকে সময়ের মাঝে আটকানো যায়নি কখনো,
আমার অবুঝ, চতুর-মন তা ভালই বোঝে।
আর সুন্দর সময়ের সুন্দর মুহূর্তগুলো কেই বা ছুঁড়ে দেয়?
সেই দুঃখ কে আর রাঙাতে পারে, আমি ছাড়া?
একটা সময় এই ভুল-আমি কেবল সময়কে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছি,
অথচ নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াটা কতোই না সহজ ছিল!
আজ, এখন যখন আমি ঠিকই ছাড়িয়ে যাই নিজেকে
তখন তোমার সেই পেরুভিয়ান কালো চুলগুলো মনে পড়ে যায় বার বার।
১০/০৫/২০২০
মানুষ কতো নিঃস্ব
হাতের মুঠোই গোলাপ পেয়েও
খশে পড়ে শীতল মাংসপেশী।
আবার মস্তিষ্কের বাড়ন্ত সম্ভাবনায়
নিজ বুদ্ধিতে ডুবে মরি
গৌড় থাই-স্যুপে।
তাই শকুনের মতন টেবিলের গায়ে
হেলান দিয়ে ভাবি,
মানুষ কতো নিঃস্ব,
নিজের কাছেই নিজেই জ্বলে পুড়ে
বার বার হয় ভস্ম!
আমি খুব দুঃখিত আমার কবি বন্ধু
আমি খুব দুঃখিত আমার কবি বন্ধু
কারণ আমি অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কবিতা লিখি।
আমি খুব অনুতপ্ত যে আমি যা লিখি
তা আসলে আমার সহজতার ছায়ামাত্র।
তার মানে দাড়ায় হয় আমি সত্যসন্ধানী
কিন্তু যথেষ্ট ভীত পারিপার্শ্বিকতার চৌহদ্দিতে।
অথবা আমি জীবনকে বেছে নিয়েছি
স্রেফ নরম-আরামদায়ক এক কেদারা হিসেবে।
আমি খুব দুঃখিত আমার কবি বন্ধু
কারণ আমি অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কবিতা লিখি।
১২/০৫/২০২০
"স্পু্টনিক"
বাবা তখনও বাসার অসমাপ্ত কাজে ব্যস্ত।
আর আমি ব্যস্ত ছিলাম ছবি আঁকাআঁকিতে
এদিকে বড়দা এসেছে ছুটিতে, কলেজ থেকে
তার সাথে উড়ে এসেছে কয়েক গাদা বই।
এই হাত থেকে ঐ হাত হয়ে “স্পু্টনিক”
ম্যাগাজিনটা জুড়ে বসেছে আমার হাতে।
বইয়ের মাঝখানে ছিল রঙচঙে কয়েক ডজন
পাতা, যেখানে ছড়িয়ে আছে সোভিয়েত
রাশিয়ার বিখ্যাত সব পেইন্টিঙের চিত্র
আর গল্প। ত্রিমাত্রিক, বিমূর্ত ছবিগুলো
দেখতে দেখতে আমি বিমোহিত হয়ে গেলাম।
আর লেগে গেলাম সেগুলোর অনুকরণে
ছবি আঁকার প্রচেষ্টায়। তারপর হারিয়ে গেলাম
ছবি আঁকার জগতে। সালটা ঠিক মনে নেই।
হয়তো ১৯৭৮ অথবা ৭৯ হবে।
"মে" মাসটা একধরনের নদী
যার গতি কখনও ফুরায় না।
নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ভাবছে এক মাঝবয়সী যুবক।
বাতাসের গন্ধ কেবল বদলেছে কিছুটা,
এ যেন সভ্যতার অসভ্য প্রয়াস।
যুবক গিটার হাতে বসে পড়ে
এবং বাতাসের ভিতর গান শুনতে
শুনতে ঝিমিয়ে পড়ে।
আর নিজেকে খুঁজে পায়
স্বপ্নের ভিতর নতুন করে
এক জাদুকর হিসেবে।
কোন এক বদ্বীপের আফ্রোদিতির প্ররোচনায়
আমি মরতে বসেছি সেই কবে থেকে,
স্কুল-জীবনের সেই তুমুল করতালি
এগিয়ে নিয়ে গেছে সেই ঘনঘটা আলোর গতিতে।
পিতার মলিন মুখখানায় দেখেছিলাম,
নীরবে সেই নিমগ্নতাকে মেনে নিতে।
আর যখন অষ্টাদশ আমাকে ডানায় ভর করলো
কোন এক বদ্বীপের আফ্রোদিতির প্ররোচনায়।
তারপর থেকে সবকিছু চূর্ণ হল, হল অগোছালো।
তাই এখন শুকনো ডাঙায় বসে বসে ভাবি,
কেবল অতি উৎসাহের তাড়নায় জলাঞ্জলি
দিতে হল এই টসটসে জীবন।
১৩/০৬/২০২০
দুঃখ বেঁচে থাকবে আজীবন
শত বাধার মাঝে সে
জেগে উঠতে জানে।
পাগলাগারদের জানালায়
বসে বসে অবলকন করে
পৃথিবীকে পবিত্র হৃদয়ে।
শুধু “সেজান” কেন
পুরো প্যারিস বাসিই
পাগল বলে সম্বোধন
করেছে “ভিন্সেন্টকে”।
কিন্তু তাদের একবিন্দু ক্ষোভও
কখন স্পর্শ করেনি তাকে।
বরং দুঃখকে বরণ করে
কাজের নেশায় বুদ হয়ে
সৃষ্টি করলেন যতোসব কালজয়ী চিত্র।
আর মৃত্যুর আগে বলে গেলেন,
দুঃখ বেঁচে থাকবে আজীবন।
ভালোবাসা যখন তোমার ছায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়
তোমার ছায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়,
বিচলিত না হয়ে বরং তাকে অনুসরণ করো।
যদিও তার চোখে চোখ রাখতে হবে অতি সাবধানে
কারণ তার পায়ের নূপুরের ধ্বনি তোমাকে
মনস্তাত্ত্বিক পতিতা পল্লিতে নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
তাই তার চোখের ওপর লেপটে থাকা
তোমার দুঃস্থ চক্ষুদ্বয়ের প্রতিবিম্বকে অবলোকন করো আরেকবার
আর ভেবে দ্যাখো তোমার ভবিষ্যৎ কতোটা অসহায়!
পুরো মহাবিশ্বটাই একটা অর্কেস্ট্রা
পুরো মহাবিশ্বটাই একটা অর্কেস্ট্রা
বেজে চলছে সে অমোঘ গতিতে।
আর জীবনটা হচ্ছে সুর ভেঙ্গে ভেঙ্গে
চুইয়ে পড়া কবিতার স্যুপ।
কিন্তু যারা সংগীতের অন্দরমহলে ঢুকতে পারে একবার
তাদের কাছে জীবনটা হয়ে ওঠে ঠিক ঘূর্ণিস্রোতের মতন।
যেন গিটারের তারের ঝংকারে আলোর গতিতে ছুটতে, ছুটতে
কৃষ্ণগহ্বরের অন্য প্রান্তে বেরিয়ে আসার উন্মত্ত প্রতিযোগিতা!
২৫/০৭/২০২০
মানুষ হচ্ছে খেয়ালি আর জীবন হচ্ছে এক অতি চালাক ইঁদুর
মানুষ হচ্ছে খেয়ালি
আর জীবন হচ্ছে
এক অতি চালাক ইঁদুর।
মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে ঘুমের ভিতর
ইঁদুর তখন চালিয়ে বেড়ায় পৃথিবী।
আর মানুষ যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন যুদ্ধে
ইঁদুর তখন তার জীবন কেড়ে নিয়ে
লাফিয়ে পরে জগতের অন্য প্রান্তে নিঃশব্দে।
১৩/০৮/২০২০
পাথরের গায়ে উপদেশমালা
বাতাসে আজ শৈল অনুভূতি
পাহাড়ি বসতিতে মিষ্টি বৃষ্টি।
জীবনের একটা সময় পাহাড়কে দেবতা মনে হয়
আর পাথরকে মনে হয় স্বয়ং ত্রাতা।
সে নীরবতা ভেঙ্গে উপদেশ ছড়িয়ে দেয়
আমার মতো কাছের পরশিদের।
তাই কবিতা হয়ে উঠে একধরণের পিরামিড
যার ভিতরে লুকিয়ে থাকে যাবতীয় গোপন বিশ্বাস।
এদিকে যৌথ বিশ্বাসের মানুষরা আজ
আকাশ ভাঙ্গার পাঁয়তারায় মগ্ন।
সেই ফাঁকে আমার আরধ্য পাথর
অক্ষত থেকে যায় চিরকাল।
অথচ তারা যদি জানতো
সেটা আমার উপদেশ-মালার পাঠশালা,
তাহলে তারা সেটাকেও ছাতু বানিয়ে ছাড়ত
আমি নিশ্চিত!
১১/০৮/২০২০
বেঁচে আছি যখন হোমো-সেপিয়ানদের মাঝে পরাজিত নিয়ান্ডারথাল হয়ে
কোন এক অজানা মহাদেশে।
সেখানেও প্রকৃতি গজায়
তবে সবুজ নয় নীলাভ-বেগুনি হয়ে।
সমাধির ভিতর নিজের ভবিষ্যৎকে দেখি
এক অদ্ভুদ সুন্দর মানুষরূপে।
সেখানে সবাই হোমো-সেপিয়ান নয়
বরং দিগুণ হোমো-সেপিয়ান।
উত্তাপহীন সূর্য তবে ল্যাম্পোস্টের মতন
আলো ছড়ানোতে ব্যস্ত সারাদিন।
বারবার ঘুরিফিরি সেই জগত
ইচ্ছে করে সারাদিন সেই জগতেই ডুবে থাকি,
তবে এই জগতের তেল-নুন কে যোগাবে?
বেঁচে আছি যখন হোমো-সেপিয়ানদের মাঝে
পরাজিত নিয়ান্ডারথাল হয়ে!
আত্ম-বিশ্লেষণ
যখন আমি আত্ম-মনঃসমীক্ষণে আত্মনিয়োগ করি
তখন জীবনটা দখিনা বাতাসে দুলে ওঠে আনন্দে।
আর ভাবি, এই জীবনে আমি কিছুটা পরাজিত হলেও
আমার অর্জন কিন্তু কম নয়, অন্তত এই আমি অনেক
বেশি মুক্ত।
প্রথমে বলতে হয়, পুরোপুরি যৌথ বিশ্বাস থেকে মুক্ত,
কিছু দোষত্রুটি থাকলেও আমি একজন এন্টাই-নারসিসিস্ট।
সমাজের মানুষরা যখন দলবদ্ধ ভাবে দিবাস্বপ্নে মগ্ন
তখন আমি অন্তত পাখির মতন ভাসন্ত, ঘুরিফিরি
হাজার বছরের ইতিহাসের ভিতর আর নিজেকে নিয়ে
ভাবি সামান্যই।
১৫/০৮/২০২০
প্রজাপতির দেশে আর হবে না যেতে
প্রজাপতির দেশে আর হবে না যেতে,
নতুন পাখায় ভর করে থামবো না কোন তীরে।
নতুন আমি, নতুন তুমি, ঘুমের পরে নতুন ভূমি
সব নতুনের ভিড়ে পাখি ফিরবে আপন নীড়ে।
১২/০৯/২০২০
কোন এক অচেনা লুভর মিউজিয়ামে
ছেঁড়া অন্তর্বাস, ছেঁড়া বিশ্বাস,
চকচকে চামড়া চায় কি আসলে?
আমি জানিনা, আমি বুঝি শুধু কবিতা,
জানি শুধু মস্তিষ্কের বুনন।
ফিনফিনে আস্তরনের ওপর জীবনের সম্ভাবনা!
ভালোবাসা যতো চেয়েছি, ততোই মিশে গেছি-
ভ্রান্তির বেড়াজালে। তাই আমি রয়ে যাবো
কেবল ভালবাসার ক্যানভাস জুড়ে,
কোন এক অচেনা লুভর মিউজিয়ামে।
০৪/০৯/২০২০
দিগ্বিজয়ি অপরাজিত আলেকজেন্ডার
আমি জানিনা, আমি কি পেয়েছি?
তবে জানি, কিভাবে কী পেতে হয়।
বয়সের বিশাল সাম্রাজ্য ঘেঁষে
আজ যে আমি দাঁড়িয়ে আছি
এক বিশাল মহাদেশের প্রান্তে।
সেই মহাদেশের সুউচ্চ পর্বতও
কিন্তু আমার ছেলেবেলা,
যা এখনও হিমালয়ের মতন ক্রমবর্ধমান।
সেই যে রংতুলি আর মোমরঙ দিয়ে
কিঞ্চিৎ জয় করেছিলাম আপন ভুবন।
সেই ভুবনে এখনও আমি স্পষ্ট ঘুরে বেড়াই
দিগ্বিজয়ি এক অপরাজিত আলেকজেন্ডারের মতন।
১৬/১০/২০২০
স্বপ্নিল নীলফুল
স্বপ্নিল নীলফুল আজও আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় রুপকথাময় বাস্তবতায়।
আমরাও চলি, চলতে চলতে থেমে পড়ি হঠাৎ করে অজানা মহাশূন্যের মাঝে।
দিগ্বিদিক হারা মানুষ তারপর ঈশ্বর সৃষ্টি করে অতি যত্নে, স্বপ্নিল মৃত্তিকায়।
আর ভাবে, ঈশ্বরের মাথায় গেঁথে থাকা নীলফুলটায় বুঝি অমরত্ব লাভের একমাত্র উপায়।
১৭/০৯/২০২০
আজ
আজ নির্মম, নিঃস্বার্থ এক গোবেচারা হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই আমার।
তাই অন্ধকারে ঢিল না মেরে, পুরাণের পথ না ধরে ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলাম অলীক রাত।
কেউ কেউ আমাকে ভালোবাসে, কেউ করে ঘৃণা; তবে একটা বিষয় খুব সত্য
যখন দেখি দৃশ্যপট থেকে আমি হারিয়ে যাচ্ছি কোন এক আলাভোলা মুক্তিকামীর মতো।
হ্যাঁ শুনতে বড়ই দুঃখ লাগে যখন দেখি আমি বন্ধুদেরও কেউ নই, আবার কাছের মানুষদেরও।
তবুও ইচ্ছা জাগে প্রবল ভাবে, ভালোবাসি আমার যতো অনিবার্য, অথর্ব বন্ধুদের
মাঝে মাঝে বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গালাগালিতেও কম যায় না,
এই প্রাচীন আত্মা; শুনে মৃত বন্ধুরাও কবর থেকে জেগে ওঠে।
২৯/০৩/২০২১
বন্ধুত্বের আজ বড়ই আকাল
বন্ধুত্বের আজ বড়ই আকাল
খুজে পাইনা কাউকে কথা বলার।
হচ্ছেটা কী আমার ভিতরে?
দিনকে দিন ছুটছি পিছু কেবল সৌন্দর্য-কলার।
কবিতার কথা বললে সবাই আজগুবি ভাবে,
মুক্তচিন্তা আনলে তবে খবর আছে!
বইয়ের কথা তুলতেই বাজে ধর্মের বানী,
বলরে নজরুল, বলরে কবীর, আমি কী নিয়ে বাঁচি?
১০/১২/২০২০
বন্ধুর সাথে এক অসাধারণ বিকেল
বিকেলের রঙ, জীবনের সকল সুখ যেন পাওয়া হল
একসাথে।
আজ তার ড্রয়িং রুমটা ধরা দিল জগতের চিন্তার
ডায়নামোতে
আমাদের নেড়ি গলিকে এড়িয়ে আমরা যেভাবে নিজেদের ভাবি।
আজ তাই হল বন্ধু, নিজ নিজ মননশীলতাকেও ছুঁয়ে দেখা হল
দ্রাক্ষালতার সুপ্রাচীন স্বাদে।
বন্ধু তুমি দীর্ঘজীবী হও, সাথে আমিও,
আমরা যেন সারা জন্মভর এভাবে মুক্ত আড্ডাই নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারি।
নিয়ম ভাঙার অনিয়ম
কারণ দুই কবিতার মধ্যবর্তী সময়টা ফুলে ফেঁপে উঠছে দিন দিন।
আমিও কম যাই না কবিতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
মাঝের বিস্তীর্ণ সবুজ আইল্যান্ডটাকে পূর্ণ করেছি নানান জাতের
অর্থকরী ফসলে।
আর রাতের বেলার চাঁদটাকে নিয়ে কতো যে গান লিখেছি
সে খবর কবিতারও জানা নেই।
তাই এখন কবিতা হয়ে উঠেছে আমার নিয়ম ভাঙার অনিয়ম।
সবকিছুই ঘুরে ফিরে আসে
দক্ষিণের জানালায় রোদ,
অথবা রান্নাঘরের ঘুলঘুলিতে
উঁকি মারা শালিক।
পড়ার টেবিলের বইপত্রে
হঠাৎ মিশে পড়া সুকুমারের বই
ইউটিউবে ভেসে আসা ডেনভারের গান
অথবা আমার ছোট্ট মেয়েটি যখন
বাবা বলে ডাকে, আমাকে
সবকিছুই ঘুরে ফিরে আসে আলোর গতিতে।
কে বলিবে তাকে
কে বলিবে তাকে
আমি যে এক পদ্মফুল
ভাসি কাঁদি অন্যের দুঃখে।
পার্থিব খরায় জন্মিলেও
মন যে আমার
প্রদীপের মতো জ্বলে
এই তুচ্ছ দেহের ভিতরে।
১৭/০৭/২০২১
কে কাকে মূল্যায়ন করে
কে কাকে মূল্যায়ন করে
তার কোন ইয়ত্তা নেই।
তবে মূর্খের দেশে মাদ্রাসার
কুলঙ্গরায় জ্ঞানী।
তাতে কোন সন্দেহ নেই
গান বাজনা হারাম করে দিয়ে
তারাই এখন মাঠের গায়ক।
আর মানুষকে মূল্যায়ন
করে বেড়ায়, জ্ঞান দিয়ে নয়
বরং আরব্য রজনীর গল্প গাঁথায়।
২১/০৭/২০২১
সাদা ডাইনির হাত থেকে
পিতার মৃত্যুতে অনেক দেখেছি
কন্যাদের কান্না, মায়েদের বিলাপ;
কিন্তু এইবার যা দেখলাম
তা একেবারেই ভোলার মতো নয়।
মা, মেয়ে আর ছেলের বৌয়ের
ঘরময় গড়াগড়ি, হাহাকার।
কিন্তু যে মরেছে সে আসলে
বেঁচে গেছে ঐ কুটিল স্ত্রীর
হাত থেকে, যে তার সবকিছু
কেড়ে নিয়ে কলুরবলদের মতন
খাটিয়েছে সারাজীবন।
লাশের চেহারায় আজ ক্রীতদাসের
হাসি দেখে বুঝতে পারি,
সে এই যাত্রায় অন্তত মুক্তি
পেয়েছে ঐ সাদা ডাইনির হাত থেকে।
২১/০৭/২০২১
অনেক দূরে যাব
অনেক দূরে যাব
পিছ ঢালা পথ যেখানে ছুঁইয়ে যায় শহরের প্রান্ত।
অনেক দূর হারাবো
প্রয়োজনে মেঘের দেশের পাদদেশে ডেরা বাঁধবো।
২৫/০৭/২০২১
মানুষের আত্মীয়তাও চিরস্থায়ী নয়
মানুষের আত্মীয়তাও চিরস্থায়ী নয়।
ধীরে ধীরে ঐ আত্মীয়রাই হয়ে ওঠে
আমাদের আজন্ম গোপন শত্রু রূপে।
বিষয় সম্পত্তির চৌহদ্দি পেরিয়েও
এদের কাছ থেকে মুক্তি মেলা বড়ই দুষ্কর।
কারণ এদের নীরবতাও হিংসা ছড়ায়।
যার অর্থ, আমাদের অধিকাংশ মানুষগুলোই
আসলে মানুষরূপী বিবেক বিহীন হাঙর,
যাদের অভিধানে ক্ষমা, দয়া, মৈত্রী
ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ চিরকালের জন্যেই নিষিদ্ধ।
২২/০৭/২০২১
দানবরাও শান্তির কথা বলে
দানবরাও শান্তির কথা বলে
অথচ ইতিহাস ঘাঁটলেই
বেরিয়ে আসে শয়তানের বেড়াল।
তলোয়ার দিয়ে আর কতো
অশান্তি ছড়াবে তারা
তার কোন ইয়ত্তা নেই।
অথচ বিশ্বাসের আগুনের কাছে
সদাই মাথা নত থাকে
তলোয়ারের রক্তে রঞ্জিত পূর্বদেশ।
তাই এখন আর কোন বিশ্বাস নয়,
এখন হবে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চাষ
তারপর দেখবে মানুষের স্বপ্ন
কোথায় গিয়ে ঠেকে?
১৮/০৮/২০২১
শহীদ কাকে বলে?
কিন্তু তোমাদের নির্লজ্জ বাহুবলের কাছে আমরা সদাই পরাস্ত।
যুক্তি যারা মানে না অথবা মানে না বিজ্ঞান
তাদের স্বপ্ন একটাই বিজ্ঞানের আবিষ্কারে হাত রেখে
ব্যাকুল কণ্ঠে অন্ধকারের জয়গান।
আমাদের শহিদরা আজ বিচারবিহীন
তাদের আত্মারা এখনও জেগে আছে
জীবন-মৃত্যুর চৌরাস্তায়
তারা ভেসে বেড়ায় নির্মল বাতাসে
আনন্দে আত্মহারা তারা নবজীবনের অপেক্ষায়।
ক্ষুদে জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
ক্ষুদে জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কতো বৈরিতা বাসা বাঁধে।
একসময়ের কাছের মানুষটা
পালটিয়ে কতদুরেই না
ছিটকে পড়ে।
হয়তো বোবা কান্নার
মিলন মেলায় দুজনেরই
কাছে আসার তুমুল ইচ্ছে জাগে।
সেটা দুজনেই বোঝে
কিন্তু অদৃশ্য দেয়ালটাকে
সরাবে কে?
২৩/০৮/২০২১
ছোট্ট মেয়ে রোদেলা
হাসি মুখে বেড়ায় কেবল
সকাল, বিকাল, সারাবেলা।
বন্ধুদের আড্ডা ভুলে পড়ি,
প্রাচীন দুঃখ নিংড়ে ফেলি
তাই মনে মনে ঘুরে আসি
বাইরের আঁকাবাঁকা পথ।
সে যখন ঘুমিয়ে পড়ে
ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে
আমি তখন গিটার নিয়ে
মেতে উঠি হৃদয় গহীনে।
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে
হৃদয়ের ছায়া
ছেড়ে গেছে।
তৃষ্ণা ক্ষয়ে গেছে
নশ্বর দেহটাকে
ছেড়ে গেছে।
অমূল্য এই মনটা আমার
ভেঙ্গে গেলে কি আর
ছোঁয়া যাবে?
৩০শে আগস্ট, ২০২১
চাইলেই
চাইলেই জীবনটাকে ডি-কন্স্ট্রাক্ট করা সম্ভব
একেবারে সন্ত হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেব।
২৫/০৮/২০২১
বছর দুয়েক আগে
আর কতদূর যাবে তুমি
লাইসেন্সবিহীন গাড়ী নিয়ে?
পৃথিবীটা ঢেকে যাচ্ছে ক্রমশ
দূষিত বায়ুর আস্তরণে।
আমি তোমার মন বলছি, মন,
একটু থামো, জিরিয়ে নাও
কিছুক্ষণ গাছের ছায়ায়;
দেখবে সকাল হতে হতেই
সে আসবে তোমার কাছে আবার।
ডানা ঝাপটিইয়ে সে তোমাকে
গান শোনাবে, কিচিরমিচির শব্দে;
সেই চেনা চড়ুই পাখিটা
যে তোমার জানালায়
হানা দিতো প্রতিদিন
বছর দুয়েক আগে।
২৮/০৯/২০২১
মানুষের খোঁজে
এই শহরের অলিতে গলিতে
এতো লোক ভিড় করে।
অথচ মানুষ নামের দেবতার
খোঁজে পাহার পারি দিতে হয়।
দিন গুনতে হয়, প্রহর গুনতে হয়,
বিচ্ছেদের বেড়াজালে, আলোছায়ার
দোলায় পুরনো বন্ধুত্বের রস নিংড়ে
মানুষের দেখা পেতে হয়।
২৪/০৯/২০২১
কোন এক অচেনা মহাবিশ্বের পথে
কোন এক অচেনা মহাবিশ্বে।
অন্য পথে যখন যাত্রা হল
তখন পেছনে ফিরে আর লাভকি?
হয়তো এক মহাবিশ্ব পেরিয়ে
ফিরতে হবে আবার তোমার কাছে।
কর্মের যে গতি, সে গতিকে
মেনে নিয়েই তো এই অবাক পৃথিবী।
কবে যে ফেলে এলাম
বানানো সব গল্পে লুকনো যতো ক্লেশ।
আর যারা ভবঘুরে কিছুটা “উইকান”,
মৈত্রী ভাবাপন্ন, আঁকড়ে আছে বিজ্ঞানের রেশ।
তাদের তোমরা উড়িয়ে দাও মিথ্যাচারে,
অপবাদে জড়িয়ে দাও, কেড়ে নাও সুখ
অথচ দেরিতে হলেও বুঝবেই একদা
হে শয়তানের চেলা, কেন তোরা এতো শিক্ষা বিমুখ?
পৃথিবীটা কোন পথে যাচ্ছে?
আমাদের দেশে কেউ যদি সকাল থেকে দেয়াল টাকে মুগুর পেটা করে
তাতে দোষের কিছু নেই
কিন্তু কেউ যদি আনমনে পিয়ানোতে হাত রেখে সুরের মোহনায় ভেসে
যায়, তাতে খবর আছে।
পাছে কারও ঘুম ভেঙ্গে যায়, তাই এপার্টমেন্টের দারওয়ান হতে পারাটাই
এখানে সবচেয়ে যৌক্তিক।
বড় সাহেবদের গায়ে তেল মেড়ে, মুখে শিষ দিয়ে যখন তখন সুরের স্বাধীনতায়
হানা দাও তেল চিকচিক।
১২/০৪/২০২২
অসুরের সাথে দেখা আবার উনিশবছর পর
উনিশবছর পর
কেড়ে নিল দিনটি আমার
সাথে দেহঘর।
অসুর তুমি কবে যাবে
আমার এই দুঃখ নিয়ে,
দেহমনের বাঁধন ছাড়া
নেই কোন বাতিঘর।
আছে শুধু স্বপ্ন আমার
আজীবন জেগে থাকার,
চিরকাল মিষ্টি মুখে
জীবনটাকে বিদায় দেবার।
কুকুরের বোধশক্তি আর মানুষের ভেল্কিবাজি
মাইলোকে হারিয়ে ছিলাম আমি বছর ছয়েক আগে।
তারপর মাস তিনেক পরে হঠাৎ আবার রাস্তায় দেখা,
সে আমার পথ আগলে রাখে, পুরনো খুনসুটি
মনে করিয়ে দেয় নতুন মনিবদের সামনে।
আমিও কেটে পরি উচ্চবিলাসি এক কাপুরুষের মতন
আসলে আমারও কিছু করার ছিল না, বাসা বদলের গল্প;
আর কতো? থাকি দূরের এক জীর্ণশীর্ণ ব্যাচেলার ঘরে
তাই মাইলোকে ভুলে চলতে লাগলাম নিশ্চিন্তে
কিন্তু মনের ভিতরে, স্মৃতিতে উঁকি মারে মাইলো
এই ব্যস।
গত পরশু আবার দেখা মাইলোর সাথে, সে তখন
গোগ্রাসে গিলছে ভাতের লাঞ্চ, বিল্ডিং এর প্রহরী
বলল, এক মহিলা তার বেশ আদরযত্ন করে।
কথাটা শুনে আপ্লূত হতেই, বাঁকা চোখে মাইলোর
সে দৃষ্টি দেখতেই নিজেকে অমানুষই ভাবতে হল।
তাই আবার কেটে পরলাম দিগুন কাপুরুষতায়।
পেছনে ফিরে আর তাকালাম না, আর ভাবলাম
‘মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলা হলেও, তবে তা সর্বক্ষেত্রে
প্রযোজ্য নয়। কুকুরের বোধ শক্তির কাছে,
মানুষের যাবতীয় ভেল্কিবাজি যেন অতি নশ্বর।
০৬/০৫/২০২২
এখন বছর ঢুকতেই ঈদ চলে আসে
ছুটির আয়োজনে পা রাখতেই থার্টি-ফাস্ট।
মোটা পুরু-টিস্যু পেপারটাও মাসগুনতে
হারিয়ে যায় অদ্ভুতুড়ে সময়ের ভিতর।
বিশ বছরের ডায়রির সাদা পাতায়
এখনও চুটিয়ে চলছে অমীমাংসিত টেস্ট।
যেখানে অক্ষরগুলো সাদা, ক্রিকেট-ব্যাট,
বল, সবই সাদা; তাই আমরা কেউ কাউকে
না দেখলেও স্বপ্নিল অনুভূতিতে ধরে নিতে পারি,
‘আমরা কেন খেলায় জিতি অথবা হারি’?
আবার নিঃসংকোচে ধরে নিতে পারি,
আমরা এখনও একসাথেই আছি,
মাঝে কেবল বছরগুলো হারিয়ে ফেলেছি
বিরহের বেহিসাবি অভিমানে।
মস্তিষ্কের বাগানে
মস্তিষ্কের বাগানে
পপি ফুল ফোটে
সে ফুলের সৌরভে
আবার গতি জাগে
এই জীর্ণ যানে।
কেউ দেখে উদ্ভাস
কেউ খোঁজে বৈভব
আমি খুঁজি স্বপ্নটা
জেগে আছে মাথার ভিতর
পপি হয়ে হাজার বছর।
১৬/০৫/২০২২
আজকের পৃথিবী
আজকের পৃথিবীতে মানুষ বাঁচে
কেবল মার্কেটিং করার স্বপ্নে।
আগে পশুরা খেত, এখন মানুষ খাবে
ফার্মের কৃত্রিম মুরগীর চিকেন রোষ্ট।
এখন মানুষের প্রচুর জামার প্রয়োজন
অথচ অর্ধেক জিন্স পড়ে থাকে
ছাদের চিলেকোঠায় অবহেলায়।
আজকের পৃথিবীতে বিবেকের চাইতে
অস্ত্রের ঝনঝনানিই বেশি
ছোট-বড় যেকোনো দেশেই ক্যান্টনমেন্ট থাকে
প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে শত্রু বানাবে বলে।
আজকের পৃথিবী কেবল মানুষের শুমারিতেই
ব্যস্ত, অথচ বৃক্ষরা অপেক্ষারত শত সহস্র
বছর ধরে কেবল মানুষের মুখে শুনতে-
পৃথিবীতে কতো বিলিয়ন বৃক্ষ থাকে?
আজকের পৃথিবী ৮ বিলিয়ন
মানুষে ভরপুর, অথচ প্রতিটি মানুষই
নিজ নিজ দুঃখ নিয়ে ঘুমায়,
জেল খানার গুমোট ঘরের
কয়েদীদের মতো বড় নিঃসঙ্গ।
০৭/০৫/২০২২
ড্যান্ডেলিয়ন
ছড়ানো গ্রীষ্মে তুমি ভেসে বেড়াও
অতল সমুদ্রের জেলি ফিস বেশে।
ড্যান্ডেলিয়ন, মানুষ জানেনা সভ্যতা কি?
তাই সে পৃথিবীর গায়ে ফসিল তেল লেপে
আর আঙুল উঁচিয়ে বলে, এটাই সভ্যতা।
কিন্তু সকল বৈরিতায়, তুমি এক বিদ্রোহী সৃষ্টি
এখনও তুমি সাহস নিয়ে ছড়িয়ে পড়
মহাদেশ থেকে মহাদেশে।
আর ফিস ফিস করে আমাকে বলে যাও,
‘আমিই সভ্যতা’।
আর কতো
আর কতো, আর কতো?
চেতনার অন্ধকারে আত্মবিসর্জন।
কৈশোর থেকে আজ অব্ধি
কতো ভুলের মূর্তি তুমি।
শিকেই রেখেছ আপন হৃদয়কে
অথচ চড়িয়ে বেড়াও
মুখোশ পরে অপ্রিয় গন্তব্যে।
১৮/০৫/২০২২
বয়সের তালে তালে
দেহ-সঞ্চালনের জড়তায় কমছে মানবিক বুদ্ধিমতা।
আমি শুধু রঙ মেখে যাই, আমার আরধ্য স্বপ্নটাতে
যাতে বন্ধুদের ঐ প্রাদুর্ভাব আমার তীরে আর না ভিড়ে।
তিমিকে কিভাবে চুমু খেতে হয়
সেটা একজন নরয়েজিয়ান
অথবা জাপানী ভালোই বোঝে।
আমরা তিমি দেখিনি, গিলিও নি;
আমরা শুধু জানি, তিমি এক বিশাল প্রাণী।
বাবা বলে কথা
সন্তানের জন্য ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারে।
আবার এই বাবারাই হঠাৎ একা হয়ে পড়ে
সন্তান যখন মায়ের হাত ধরে অনিশ্চিতে পারি জমায়।
তখন এই বাবাদের আর কিছুই করার থাকে না
রাস্তার কুকুরের মতন হন্য হয়ে ঘুরাফিরা ছাড়া।
বাবা-কুকুর ছানাদের ছেড়ে কু-শ্যালয়ে যেতে পারে
কিন্তু মানুষ-বাবা শুঁড়িখানায় মাতাল হয়ে
কেবল সন্তানের কথা ভাবতে থাকে।
সঙ্কীর্ণ দিগন্তের শিশু-বৃদ্ধ
যার সারাজীবন কেটেছে
কেবল খ্যাতির অন্বেষণে।
বয়স তার সত্তর ছুঁই ছুঁই
অথচ সে এখনও বুঝল না
তার হৃদয়টা জানালাবিহীন;
আকাশ ছুঁতে পারেনি
কখনও তার অন্তরস্থল।
অথচ পাড়ার সেই
কালো, খাটো ছেলেটা
সারাদেশটা রাঙ্গিয়ে আজ বিখ্যাত।
খ্যাতি তার জুটল কেন?
ঐ শিশু-বৃদ্ধ, সেটা বুঝতে নারাজ।
তাতে তার সঙ্কীর্ণ দিগন্তটা
আরও সঙ্কুচিত হতে বাধ্য হয়।
আজ থেকে সম্যক দৃষ্টির জয় হোক
মাথার ভিতরে অদৃশ্য সুখের উত্থান হোক।
জগত দেখার দৃষ্টি পালটিয়ে
স্টয়িক দর্শনের সীমান্তে জাহাজ নোঙর তুলুক।
আজ থেকে
হ্যাঁ, আজ থেকে।
বাতাসে টাকার গন্ধ
দক্ষিণের বারান্দা, হা-করলেই
টাকা উড়ে যায় এলন-মাস্কের পকেটে।
আবার ঝরো বাতাসে
দরজার আঘাতে কিছু লাভ ঢুকে যায়
বিল- গেটসের ফেইডেড জিন্সের ভিতর।
এভাবে হোমো-সেপিয়েন্সদের জীবনটা
দাঁড়িয়ে গেছে নির্ঝঞ্জাট একটা কোলাহলে,
যে কোলাহলের নাম “টাকা”।
ইচ্ছে করে মাথার টাকে
পেনড্রাইভ ঢুকিয়ে ইচ্ছে মতো
প্রেরণ করি যতো শত ডলারের নোট।
তারপর তাদের এলিয়ন-ডিস্কের ভিতর
পাঠিয়ে দেব আলোর গতিতে মঙ্গলে।
সেখানে বিলিয়নার-গন ট্রিলিনিয়ার হোক
আমাদের কোন দুঃখ থাকবে না।
আমাদের শুধু একটাই চাওয়া
টাকাবিহীন, ঢাকনাবিহিন, এক দিগম্বর পৃথিবীর।
অহেতুক কাউকে ডাকবো না আর
অহেতুক কাউকে ডাকবো না আর
নিজের ভিতরেই যখন সকল আনন্দ।
হুট হাট সংসার ঝামেলাই
নিজেকে জড়াবো না আর।
তবুও আজকের দিনটি আমার
অদৃশ্য সংসারে মিশে যাক।
বলা যেতে পারে,
জীবনের সুন্দরতম আকস্মিক ঘটনা।
যে ঘটনার মুল্য বুঝতে হল
প্রায় বছর বারো-তেরো পরে।
কিন্তু বুঝেও কোন লাভ হল না
সে হৃদয় তুলে নিয়েছিলো দৃশ্যপট থেকে।
আজ প্রায় তিনটি বছর পরে
আমিও মুক্তি পেলাম এই সংসার থেকে
যাতে দুনিয়াটা আমার, তোমার সবার কাছে
মঙ্গলময় হয়ে ওঠে,
বিদায়।
০৭/০৮/২০২২
আমাদের মামারা
পিতার তৈরি মাঠে তারা গরু গুনে গুনে দেখে।
আকাশ জুড়ে তাদের কেবল খ্যাতির প্রেরণা
ভাগ্নে-ভাগ্নির কীর্তি দেখলে বেড়ে যায় বেদনা।
আমাদের মামারা সবাই দীর্ঘজীবন পাবে
হৃদয় তাদের থাকবে পরে সঙ্কীর্ণতার আঁচে।
শিল্পসাহিত্য মানুষের মৌলিক অধিকার
সেটা ভুলে করছে তারা অমূলক অবিচার।
আমাদের দেখলে মামাদের হিংসে জাগে
তা তাদের খোঁচা কথায় প্রায়ই ফুটে ওঠে।
কিন্তু তাদের দেখলে আমার বড়ই মায়া লাগে
কোন অভিশাপে মামারা আজ এতো নিষ্ঠুর হলে?
তাই বাংলা সাহিত্যের চরণে পড়িয়া করি এই মিনতি
দাও তাদের এই জগতের নোবেল হিংসার স্বীকৃতি।
এলিয়ন কুশীলব
আমরা কি হারিয়ে যাব, প্রচারবিহীন মানুষগুলো
আত্ম-প্রচারকদের ঢোলের বারিতে ক্লান্ত জনপদ।
ভারতের কুহুক চৌধুরী ও বাংলাদেশের সৌম্যের
মিল বন্ধনে যুক্ত হল আরেকটি তেল সমাতির দিন।
ইহাতে আমরা শিখিতে পারলাম কাহাকে, কিভাবে,
কোন সময়ে তেল মারিতে হয়। কুহুক চৌধুরীর
দরাজ কণ্ঠ, ছাই করে দিল বুঝি বাংলাদেশের গর্ব!
নানা একদমই নয়, বরং তাহারা দুজনেই একসাথে
উড়িয়ে দিল টিনের ছাউনি দেয়া ঐতিহ্যবাহী ঘর।
কিন্তু আমাকে কেন টানিলে সেখানে, হে সৌম্য আর্য
আমি যে এক অসহায় কবিতার রাজ্যের এলিয়ন কুশীলব।
১৫/০৮/২০২২
হে অতীত নারী
তোমার কথা কি ভুলিতে পারি, হে অতীত নারী
নরম কোমল মনটি তোমার
আমার শত জনমের সাথি।
আমার কাছে এসে ছিলে
জীবনের সংজ্ঞা দিতে।
বুঝিনি তখন সেই সেই পথ
আজও ক্ষণে ক্ষণে ভাবি।
উনিশটি বছর কেটে গেছে
কতো শত কঠিন পথে
চরাই উত্রাই পেরিয়ে
তোমাতেই নোঙর ভিড়ে।
০৮/০৮/২০২২
জঞ্জাল্ময় জীবনে এক নির্ভেজাল পদ্ম
কেহ বুঝিল কি, বুঝিল না।
তাতেও সে নির্মোহ।
অতলান্তিক পারি দিয়েছে সে
বহুবার, স্বপ্নের মাঝে।
ভিক্ষাবৃত্তি, নির্লজ্জ সত্য
সবই তো ঝরে পড়ল
তার আপন মুঠোই।
তবুও সে তো বেশ আছে
কাকের মতো বাসা বেঁধে
পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে।
জীবনটাকে শুরু করি আবার নতুন করে
এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই স্বপ্নও ছুটে বেড়ায় পিছু পিছু;
আকাশী মেঘের স্বপ্ন অথবা মাথার ভিতরে জেগে থাকা সবুজঘাস;
এইসব প্রপঞ্চ সবই আমাকে টেনে নিয়ে যাই প্রতিসন্ধির প্রান্তরে,
স্বগতোক্তি ছড়িয়ে যখন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসি,
তখন পথে প্রান্তরের শুকনো পাতাগুলোও প্রশ্ন করে বসে,
বয়স কতো হল?
আমিও মনে মনে উত্তরটা এড়িয়ে মিশে পড়ি সভ্যতার নৈরাজ্যে
চাল, ডাল আর তেলের হিসেবে যখন ব্যস্ত রাখি এই মস্তিষ্কটাকে।
তখন বেসুরো কাকের কণ্ঠেও সুর খুজে পাই আনমনে,
ফুতপাতে ছড়ানো আবর্জনায়ও খুঁজে পাই মানুষের অবয়ব।
আর ইচ্ছে করে, জীবনটাকে শুরু করি আবার নতুন করে,
স্রেফ রংতুলি আর সুরের ছোঁয়াতে।
১৫/০৮/২০২২
সৌম্য আর্য্যের একটাই চাওয়া
সৌম্য আর্য্যের একটাই চাওয়া
আসল কবিদের নিকুচি করা,
জানেন শুধু তেল মারতে
আর অল্পবিস্তর জ্ঞান ঝাড়তে।
বিশ বছরের এন-জিও-টা
সৌম্য আর্য্যের সফলতা,
এখন তিনি বিনয়ী সেজে
খ্যাতির নেশায় আত্মহারা।
২১/০৮/২০২২
ভালোবাসি কেবল এই নিঃশ্বাসটাকে
সময়টা বদলাচ্ছে অতি দ্রুত
পকেটের আধুলিও শূন্য
তেলের দাম, মরিচের দাম
মুদ্রাস্ফীতি যত্র তত্র।
আমিও শূন্য হচ্ছি চোখের আড়ালে
নিয়তির দিকে ছুটছি
সিনেমার মতন জীবনটাকে
ছাড় দেব না এক চিলতে।
কতো কষ্ট, দুঃখ পেয়েছি জগতে
সে কথা বলতেও আজ ক্লান্ত লাগে
তাই শ্বাসে শ্বাসে শুধাই শুধু নিজেকে
ভালোবাসো কেবল এই নিঃশ্বাসটাকে।
২০/০৮/২০২২
তোমাকেও ছেড়ে যেতে হবে - হে ছায়া বৃক্ষ
হে ছায়া বৃক্ষ,
অবশেষে।
তুচ্ছ এক দুঃখ
গোছাতে গিয়ে
আবার দেখা হবে
নিজের সাথে নতুন করে।
অথচ পেছনে ফিরলেই দেখি,
বাবা, মা, সবাই
সিনেমা রিলের উলটো দিকেই হাঁটছে।
আর এই আমি বসে আছি
গিটার হাতে,
নতুন কোন ছায়ার সাথে
সুর মেলাবো, নতুন করে।
ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি অন্ধকারে
একলা চাঁদ দেখতে।
ভালোবাসি একলা ঘরে
সুরের নেশায় বুঁদ হতে।
ভালোবাসি আঁকতে ছবি
আঁকিবুঁকি ছড়াতে।
ভালোবাসি দিনের শেষে
শ্বাসে শ্বাসে হারাতে।
ভালোবাসি কাব্য, গদ্য
মৈত্রী ও মুদিতা।
ভালোবাসি অহর্নিশি
শত্রুর সাথে ভনিতা।
ভালোবাসি নিরিবিলি
মৃতের কথা ভাবতে
ভালোবাসি সময় এলে
ভণ্ডদেরকে বাঁশ দিতে।
২৩/০৮/২০২২
স্বরাজ বনে যাওয়ার গল্প
পুরনো মার্কেটের কোণে
সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই চোখে পড়ে যে দোকান,
সন্ধ্যা নামলেই আড্ডায় মেতে উঠে
কিছু দামাল।
দালাল, বললেও ভুল হবে না তাদের।
তবে হাতে গোনা কেউ কেউ
আসে অন্য উদ্দেশ্যে।
আমি ঐ কেউ কেউদের
একজন হতে চেয়েছিলাম।
যারা জীবনকে উপলব্ধি করে
অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে।
চলন্ত বাসের জানালায়
মিশে যাওয়া ভ্যানিশিং
পয়েন্টের ভিতর।
কিন্তু সেই দৃষ্টিকোণ
একদল বয়োজ্যেষ্ঠ মূর্খদের আড্ডায়
সদাই আহত হৃদয়ে ফিরে আসে।
একবার নয়, দুইবার নয়, বারবার।
এখন আমি তাদের দৃষ্টির
গন্তব্যকে স্থির করতে পেরেছি,
অর্থ, ক্ষমতা আর তেলসমাতি।
তাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি
সেই সিঁড়ির মায়া থেকে।
এখন নিজের ভুবনেই বসবাস আমার,
আড্ডায় মেতে খুনসুটি করি
হাজারো মৃত আত্মার সাথে।
তারপর শ্বাসে শ্বাসে
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বরাজ হয়ে।
০৩/০৯/২০২২
ঝাঁজরার রাজা
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে সবুজপাতার নিঃশব্দ
উল্লাসে মেতে উঠে বৃক্ষরাজ বনে যেতাম।
তবে অযুত, নিযুত মানদণ্ড পেরিয়ে
নিজের এই অদৃশ্য গেরুয়া বসনটাকে
বিলিয়ে দিতাম প্রকৃতির রাজ্যে।
আর ঝাঁজরার রাজা সেজে
অথর্ব, বানোয়াট রাজকুমারদের
বুঝিয়ে দিতাম কাহাকে রাজা বলে?
আনমনে
ফ্ল্যাটের নিঃসঙ্গ জানালাটিতে,
যাতে দখিণা বাতাসের দোলায়
হারিয়ে বসি নিজেকে আনমনে।
কোন এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে
কোন এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে
বেড়িয়ে ছিলাম শূন্য হাতে ।
পাহাড়ি স্মৃতির পথ মারিয়ে
যখন উঠে গেলাম কোর্ট-হিলে।
বৃষ্টিও নামলো অঝোরে
চারদিক লোকে লোকারণ্য
লুকোনোর স্থানও প্রায় শূন্য।
তাই পুরনো এক বন্ধুকে পেয়ে
ঢুকে গেলাম তার চেম্বারে।
উকিল বন্ধুর খুপরি রুমে
ডজন খানেক খদ্দের
গেছে আটকে।
বাতাস বিহীন করিডরে
হঠাৎ পুরনো এক কণ্ঠ
ভেসে আসে ।
আর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়
চিনতে পেরেছেন এই আমাকে?
আমিও ভাবতে থাকি,
ভাবতে ভাবতে
হঠাৎ পৌঁছে গেলাম স্মৃতির কিনারে।
বললাম, তুমি জেসিকা না?
কালো বোরকা থেকে
একটা হাস্যজ্জল মুখের উদয় ঘটে।
আর বলে চিনতে পেরেছেন তাহলে।
আমিও ভাবি, মেয়েটি মনে রাখল কিভাবে?
না না মেয়ে তো নয়, এক মাঝবয়সী নারী।
সেই কলেজ জীবনে একবার তার সাথে
গেয়েছিলাম, এসো নিপো বনে ছায়া বীথি তলে।
তারপর কেটে গেল বছর ত্রিশ বছর।
০৪/০৯/২০২২
দুনিয়াটা হচ্ছে মিথ্যে
দেখ তুমি অন্য চোখে,
যে চোখ কেনা যায় না
সচরাচর দেখা যায় না;
তবে অন্তঃস্থলে জুড়িয়ে দিয়ে
চর্মচক্ষুর জগত এড়িয়ে
মিশে পড় অপার আনন্দে।
বিকাশের টাকা
বিকাশের টাকা আসছে উড়ে
ভাবছে বসে দোকানঘরে,
চাল, ডাল আর নুন কিনতে
মানিব্যাগে রক্ত ঝরে।
বৃষ্টি নামে খেলার ছলে
কালো মেঘে আকাশ ছাপে,
দোকানঘরে ঠাই নাই তাই
পথচারীর হট্টগোলে।
দোকান মালিক প্রশ্ন করে
আর কতক্ষন অপেক্ষা তবে?
মাহমুদ মিয়া হেসে বলে
এই যে বিকাশ ঢুকল সবে।
০৭/০৯/২০২২
বুনো প্রকৃতির স্মৃতি
ফুটপাত ধরে ছুটছিলাম
আর ভাবছিলাম বছর কুড়ির আগেকার কথা।
ছিলো না যখন বহুতল ভবন
ছিল কতেক নিচু দালান।
আর তার পেছনেই চোখে পড়তো
স্মৃতি যুক্ত পাহাড়, গাছগাছালির জয়গান।
বিশ বছরে রাস্তাটার আদি পড়শিগুলো
সব উধাও হয়ে গেছে হঠাৎ করে।
পাখিগুলোও ঘর বেঁধেছে নতুন করে
মহিলা কলেজের বনরাজিতে।
ক্ষয়িষ্ণু বনরাজির পেছনে বাজারটায় দাঁড়ালে
এখনও চোখে পড়ে
কিছু বুনো প্রকৃতির স্মৃতি
টিয়া, শালিক, ঘুঘু আর চড়ুইয়ের
ঘুন-ঘুনানি।
একদিন ছেড়ে যাবে এই গৈরী বসন
শরীরের ভিতর পিস্টনদের অগোছালো নড়াচড়া
বুঝিয়ে দিচ্ছে এখন আর মবিল ঢেলেও তেমন লাভ হবে না।
আমার যবুথবু নড়বড়ে চেসিসটা তবুও ক্লান্তিহীন
একে, একে যুদ্ধ সামাল দিয়ে চাচ্ছে স্রেফ তোমার জন্যে।
তোমার রাগ, অনুরাগ অথবা বিরামহীন আব্দারের মাঝে
আমি খুঁজে পাই, এক অসীম ধৈর্যশীল সন্তকে
শত বাধার মাঝেও যে প্রমাদ হবে না;
অশোভন হবে না;
টলাবে না তাকে
একবিন্দু শঙ্কার ঢল।
বরং সে আরি পেতে, মৃত্যু দেবতাদের
কথোপকথন শুনতে শুনতে
একদিন ছেড়ে যাবে এই গৈরী বসন।
সংশয়বাদী নারী
যে নারী সীমাহীন দুঃখ নিয়ে বেড়ায়।
তার আঁচলে নারীসুলভ গন্ধের সুখ
কবে যে হারিয়ে গেছে,
সে নিজেও জানে না।
কিন্তু আমি সেই সুখ খুঁজে পেয়েছি,
কোন এক তারকারাজির রহস্যময়
আলোকরশ্মির ভিতর।
মাঝে মাঝে, সন্ধ্যা নামার অনেক পরে
সেই নারীর হঠাৎ উদয় ঘটে,
ভিন্ন ভিন্ন অজুহাতে, ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের সুরে;
বলা বাহুল্য বাতাসও ভারী হয়ে ওঠে,
তার কটকটে বডি-লোশনের গন্ধে।
সে আমাকে প্রশ্ন করে,
‘তুমি এখন কোন ভাবনায় মগ্ন?
আমার নিরবতায়, সে যে উত্তর খুঁজে পায়,
তাও অনুভব করি আমি অদৃশ্য পরচিত্ত-বিজানন জ্ঞানে।
“সে ধরে নেই, অন্যকোন নারীর উপস্থিতির কথা,
অথচ আমি তখন মগ্ন তারকারাজির রহস্যময় উন্মাদনায়।
এলোমেলো মিউজিক রুমের পুরনো গিটার ও একজন সিজারের গল্প
আমাকে সারাজীবন আকর্ষণ করে যায়,
কোন এক পরাক্রমশালী সম্রাটের প্রিয় সম্রাজ্ঞীর মতো।
তার তারের ঝংকারে আমি সর্বদাই আপ্লুত
তা দেখে অন্য গিটার-সুন্দরীগুলো বেঁকে বসে,
আমার অবর্তমানে হয়তো প্রিয় সম্রাজ্ঞীর সাথে
জুড়িয়ে দেয় তর্ক; আর বলে, এতোটা পক্ষপাতিত্ব কী ঠিক?
কিন্তু আমি তাদের প্রতিও সমান অনুগতশীল,
যদিও বয়সের ভারে, এই আমি নামক সম্রাটের
ইচ্ছেটা কিছুটা নুজ্জ; তাছাড়া এই বয়সে
প্রতিটা গিটার-রানীর গায়ে সোনার তার
মুড়িয়ে দেয়া যেমন ব্যয় সাপেক্ষ তেমনি গ্লানিকর।
তবে কথা হচ্ছে, এই সম্রাট যদি সিজারের মতো
সর্বদায় রণ-মুখী হতো, তবে কি আর গিটার-রানীগুলো
ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাত?
বরং তারাও বহুগামি সম্রাটের সান্নিধ্যে
নতুন নতুন রাজ্য জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকতো।
আর তাতেই যুক্ত হতো নব নব সুর,
নব নব উদ্দীপনা।
পৃথিবীর যতো দ্যা ভিঞ্চি
পৃথিবীর যতো দ্যা ভিঞ্চি – বেঁচে আছে এখনও ঘুরে ঘুরে;
অথচ নকল জ্ঞানীরা এখন প্রমত্ত তাদের চামড়া চিবিয়ে খাবে বলে।
বারুক যুগের সকল নিপুণ পলিম্যাথ কিংবা
রোম্যান্টিক যুগের তীব্র সংবেদনশীল আত্মারা,
প্রতিনিয়ত ধরা দিয়ে যায় আমার ধ্যানের আসনে।
ভিন্সেন্টের নীলাভ বিষন্ন রঙ অথবা জপ্লিনের
বিদ্যুৎ গতির সুর সব নিভে যাচ্ছে হিংসুটে প্রফেসরদের
বার্থডে পার্টিতে এক এক করে।
আমি শুধু বেঁচে আছি নিঃসঙ্গ এক ভিঞ্চি হয়ে
এইখানে, এই সমতলের চতুর কাঠমোল্লাদের দেশে।
২৪/০৯/২০২২
সকাল বেলার দৌড়
এই বয়সে দৌড়? কিন্তু সহজাত প্রতিভা বলে কথা।
সুপ্ত থাকলেও হার মানতে নারাজ। তাই দিনের বেলায়
ভোঁ দৌড়ের বদলে নির্মল সকালটাই বেছে নিলাম।
ওদিকে রাত জুড়ে টিভির পর্দায় মেক্সিকোর তারাহুরামা জাতীর
দৌড়ের প্রতিভা দেখে ভাবলাম বয়সটা অজুত নিযুত
যতই হোক না কেন, আজ থেকেই একক দৌড়ের যাত্রা হোক।
শুনে আরেক লেখক দৌড়বিদ “হারুকি মুরকামির”
পোট্রট খানাও হেসে ওঠে বইয়ের মলাট থেকে,
আর বলে ব্যাটা আমার বইটাই শেষ করতে পারলি না,
তুই দিবি আবার সকাল বেলার দৌড়?
পনেরো তলার বন্ধুদের
বিকেল জুড়েই আড্ডায় মেতে কেটেছে বহুকাল।
গিটার হাতে জানালাতে দেখেছি সন্ধ্যার রূপ
ঘনবসতির শহর তবুও পেয়েছি অনেক সুখ।
দেখার আনন্দে, শোনার আনন্দে, বন্ধুদের আনাগোনায়
হারিয়েছিলাম নিজেকে একদা মিষ্টিমধুর দোটানায়।
বাসায় ফিরতে দেরি হতো তাই
ছেড়ে অবেলায় বন্ধুত্বের হাত
বন্ধুদের সাথে জীবনটা যেন
মহাকাব্যিক এক অনুরাগ।
গানের সুরে ব্যবসায়ী, চাকুরে
হয় যদি একাকার।
সুখটানে দুঃখ তবে
হবে কুপোকাত।
আমায় নিয়ে ভাবছে যে জন
আমায় নিয়ে ভাবছে যে জন
তাকে আমি করি যতন।
দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে
কেটে যে যায় এ-জীবন।
সে আর নয়কো কেউ
আমার ছোট্ট মানিক রতন
হাজার নামে ডেকে ডেকে
মগ্ন থাকি সারাক্ষণ।
রাজকুমারী, এখন থেকে
তোমায় নিয়ে চলবে
জীবন-ঘড়ি;
তোমার বৃদ্ধি দেখতে দেখতে
যেন কুশল চিন্তায়
মরি।
২৪/০৯/২০২২
সালোকসংশ্লেষণের মতন
তাই ধ্যানে বসলেই কিস্তিমাত।
ফিরতে আর ইচ্ছে করে না, এই যবুথবু জীবনে;
যে জীবনের আড়ম্বর হারিয়েছে বহুকাল আগেই।
তবুও আমি ধন্য, কারণ স্বরাজ্যে জাতিস্মরের
আত্মগোপন আবার টুংটাং শব্দে জীবন কাটিয়ে দেয়া।
মন্দ নয়, ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা এক মনুষ্য উদবিড়াল!
বন্ধুত্বের আদ্যোপান্ত
তাকে তুমি কোন সাহসে বলবে বন্ধুত্ব।
অথচ প্রয়োজনের সময় সেই মৃত বন্ধুত্বও
দাবী করে বসে সাহায্যের।
প্রত্যুত্তরে তোমার অভিমানটা কী হবে?
বড় ভুল হয়ে গেল জীবনের কোন এক পর্বে
অ-বন্ধুকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে।
বন্ধু শব্দটার আসল অর্থ কিন্তু সম-মননে,
সহনশীলতায়, মিষ্টি দায়িত্ববোধে।
তবে অনেককেই অন্ধের মতো
বন্ধুত্বকে বয়ে বেড়াতে দেখা যায়;
যেন বন্ধু বললেই বন্ধু বনে যেতে বাধ্য মানুষ।
তাই বলতেই হয়, জীবনবোধে আমি যতটুকু উদার
বন্ধুত্বের বেলায় আমি ঠিক ততটুকুই কঞ্জুস।
কারণ আমি বন্ধুত্ব শব্দটা দিয়ে
হারতে অথবা জিততে রাজি নই কখনও।
আমি কেবল বুঝি, বন্ধুত্ব শব্দটা যতোটাই দামি,
ঠিক ততোটাই মিষ্টি।
এঁদো পুকুরের মানবকুলের জন্যে
হা করে থাকে স্মৃতির ভিতর;
ধ্যানে মগ্ন হলেই বুঝতে পারি
‘আমি’ নিমগ্ন হচ্ছি অন্য এক জগতে।
যে জগতে কাটিয়েছি আমি কয়েক যুগ,
যেভাবে পা-পিছলে পড়লাম এই পৃথিবীতে!
তাই একদিন এই নীল গ্রহটাও ছেপে যাব
কোন এক উৎকর্ষ সময়ের উদ্দেশ্যে।
আবেগ ঘন, বোকা বোকা কর্মে
অবশেষে চতুরতার কিছু ছাপ রেখে গেলাম
এই এঁদো পুকুরের মানবকুলের জন্যে।
বন্ধু, এবার কিছু রকেট পুঁতে রেখেছি অদৃশ্য অন্তরে
সেই রকেট পোঁ করে পারি দেব নতুন এক জগতে।
জীবন মানেই গুডলাক
আমাদের পৃথিবীটা আমাদের মতো।
যে যেমন দেখে স্বপ্ন
বাস্তবতাটাও হয় তেমন স্বচ্ছ।
কেউ বলে ব্যাডলাক,
আবার কেউ বলে ফোকলা দাঁতে
জীবন মানেই গুডলাক।
কবিতায় প্রাণ দিতে চেয়েছিলাম
কিন্তু সেই কবিতার সময় আর প্রয়োজনীয়তা
হারিয়ে গেছে বহু আগেই।
এখন কবিতা লিখি কেবল শব্দের জামা
বাজারে বিক্রি করার স্বপ্নে।
তাই কেউ ভুল বোঝে, আবার কেউ
ভক্ত হয়ে আমার কবিতার এলসি খুলে
এলিয়ান্দের কাছে এক্সপোর্ট করার স্বপ্নে।
আহ, মন্দ হতো না, যদি এলিয়নগন
আমার কবিতার পাঠক হতো;
কাড়ি কাড়ি টাকা বানিয়ে কোনোএক
নতুন পৃথিবীর এলন মাস্ক সেজে
চাবি ঘুরাতাম কেবল নিজের মস্তিষ্কে।
মানুষ তবুও
মানুষ তবুও খ্যাতি প্রেমী
ক্ষমতার ভক্ত, মোসাহেবের শিশ্য।
রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতার কাছে
রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তিটাই মুখ্য।
পুতিনের লৌহদণ্ডের কাছে বারবার
মাথানত করে অস্ত্রভস্কির স্বদেশী জনতা।
ট্রট্সকিকে পচানোর তাগিদে
আইজেনস্টাইনও নির্মাণ করে বসে ‘অক্টোবর’
যাতে স্ত্যালিনের শাসন আরও দীর্ঘায়িত হয়।
এটাই মানুষের রীতি এবং
এটাই মানুষের আসল প্রকৃতি।
বিনয়ের কথা বলে মানুষ কেবল
অদৃশ্য প্রশংসার দাবীদার হয়।
কিন্তু আসল বিনয়ীকে পিটিয়ে
ছারপোকা বানিয়ে ময়লার স্তূপে
নিক্ষেপ করতেও দ্বিধা করে না, মানুষ।
১৫/১০/২০২২
আবার গিটার হাতে
চারিদিকে যুদ্ধের ডামাডোল
ইউক্রেইন, রাশিয়া, মুদ্রাস্ফীতি।
দাবার বোর্ডে কার্লসনের পরাজয়,
চাতুরি নাকি ভেল্কিবাজি?
আড়ালে থেকে যায় অনেক কিছুই,
অথচ এই সময়ে আমি ভাবি,
গিটার হাতে সুর ছড়ানোর কথা;
ছড়াবো বৈকি, আমার তোমার
সুরের স্বপ্ন বৃথা যাওয়ার মতো
সংজ্ঞায়িত নয়।
রাজধানীতে তাপদাহের বৃষ্টি ঝরে,
লোডশেডিং এর ছায়াতলে নামছে
সংস্কৃতি-বিমুখ মানুষের ঢল।
তবে ঠিক এই সময় আমি নামবো
আবার সেই পুরনো গিটার হাতে
তেতো সত্যগুলো উচ্চারণ করার উচ্ছ্বাসে।
১৭/১০/২০২২
সম্ভাবনা
জীবন এখন শান্ত, নীরব।
ব্যথিত হওয়ার সম্ভাবনা
এখন নেই।
এখন দেহটা খুলে
ঝুলিয়ে রাখো তারে।
হৃদয়টা হয়ে যাবে
আকাশের চাঁদ
আর আকাশটা হবে
তোমার রূপালি সম্ভাবনা।
১৭/১০/২০২২
আমি কি চিৎকার করে বলবো
আমি দুঃখ পাই।
নাকি পাথরের মতো সয়ে যাবো,
সকল দুঃখ চিরকাল।
আমি কি বাস্তবতা স্পর্শ করে যাবো
সর্বদাই।
নাকি বাস্তব ঘটনা দেখে দেখে
অনুভূতির গবেষণাগার বসাবো
নিজের ভিতর।
তারপর সময় এলে
সেটা ভেঙ্গে কবিতা লিখবো,
মানুষ আর অমানুষের জন্যে।
মিউনিসিপালটির ট্রাকের মতো করে
এখনও হাজারো বিচ্ছুর দল
কিলবিল করে মাথার ভিতরে
অতি উৎসাহে।
আসলে অতি উৎসাহে জীবনকে দেখলে
মুহূর্তটা আতশি কাঁচের ভিতর
জলজ্যান্ত হয়ে উঠে চটপট।
সবুজ ব্যাঙ যেভাবে সজোরে লাফ দিয়ে
আবার ফিরে আসে চেনা ডোবায়;
তেমনি মানুষদেরও অতি উৎসাহে,
অতি চাঞ্চল্যে, জীবনটাকে টেনে
নিয়ে যেতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে
মিউনিসিপালটির ট্রাকের মতো করে।
ক্রিসমাস আসছে
ক্রিস্মাস আসছে নিভু নিভু আলো পেরিয়ে
শরীরের মজ্জায় শীতের আমেজ;
চায়ের কাপে লিকারের বদলে
হুইস্কি হলে মন্দ হতো না, বন্ধু।
দুজনে আড্ডা দিতাম,
প্রাগৈতিহাসিক দিনগুলোর কথা
রোমন্থন করতাম।
তারপর হঠাৎ ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে
আশ্রয় নিতাম, কোন এক দোকানীর ছায়াতলে।
বন্ধু, বলো না গো,
সেই সব দিনের কথা
যখন আমরা ক্রিসমাসের
সাধ নিতে ছুটে যেতাম
ক্যারল অ্যান্টির বাসায়।
তারপর লোভনীয় ফ্রুটকেকে কামড় বসিয়ে
মগ্ন হয়ে শুনতাম ক্যাসেট প্লেয়ারে
নিঃসৃত নানান ইংরেজি গান।
২৩/১২/২০২২
ভালোবাসার প্রতিধ্বনিত রূপ
নিঃশব্দে, মিষ্টিমধুর বাতাসী সুরে।
ধ্যানের মগ্নতায়, হাজারো লোমকূপে
সূর্যের চাইতেও প্রখরতা নিয়ে।
স্মৃতিযুক্ত পথ, আশা, ভালোবাসা
সবই এক হয়ে পড়ে সেই স্বপ্নে।
যে স্বপ্ন এতোটাই মধুর আবার তেতো
স্বপ্নের সাথেও তুলনায় যাবে না।
অথচ সেই পথ এখনও খোলা আছে
যে পথে আমি আর তুমি
নির্দ্বিধায় হেঁটে যেতে পারি
মৃত্যু দেবতার স্বপ্নিল ছোটগল্পে।
দুঃখটা লেখা ছিল চাদরের গায়ে
জানালাটা যতই রোমাঞ্চকর হোক না কেন?
সুখটা আসলে পালিয়ে বেড়ায় জোছনা রাতে।
এখন পরাবাস্তব স্তন, নিতম্ব কেটে কেটে
একটা ঘর, গৃহস্থালি তৈরি, তবে তা সাময়িক।
হাজার বছরের সমুদ্রের দুঃখ কি মিটে যাবে?
সূর্য যদি কাছে এসে সুরুত করে গিলে ফেলে
বিশাল জলরাশি!
নিঃসঙ্গ হৃদয় নিয়ে যখন ঘুরি এই শহরে
তখন সত্তর ছুঁই ছুঁই আরেক নিঃসঙ্গ
কড়া নাড়ে আমার দারে।
চেহারাটা মলিন তার, এতোটাই মলিন
যেন হাজার বছরের দুঃখ ফেরি করে ঘুরে সে,
আর বলে, ‘দুঃখ নিবে, দুঃখ?
আমি তার কাছাকাছি আস্তেই বুঝতে পারি,
সে আমার বড় কাছের কেউ একজন,
ছিটকে পড়েছে জন্মান্তরের কিউ থেকে।
সে মৃত প্রায় বৃদ্ধ যখন মুখ খোলে আর বলে,
‘আমি কিছু নই, সাধারণ এক মদখর’
শুনে আসন্ন শীতের শহুরে বাতাসেও
মাদকতা নেমে আসে হুহু করে।
কারণ এই শহরের আনাচে কানাচে
আলো জ্বালিয়ে, শত চেষ্টায়ও
আমি আরেকজন সত্যবাদী মানুষ খুঁজে পাইনি,
ঐ শিশু বৃদ্ধ মানুষটি বাদে।
উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ুক
উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ুক
এই নশ্বর দেহ জুড়ে;
মৃত্যুকে দেখিয়ে দাও
আলোকিত পথ।
জীবনকে গড়ে তুলো
সৃষ্টির উন্মাদনায়।
ক্ষয়িষ্ণুতা এবার অনেক হল
তোমার পাওনা সকল
মিটিয়ে দিলাম,
ভিনগ্রহের বিকাশ এজেন্টের কাছে।
এবার তুমি যেতে পারো
তোমার কালো ডানা মেলে।
২৮/১২/২০২২
মূল্যায়ন অ-মূল্যায়ন
তবে থামবো না কোনদিন,
এই আমার বিশ্বাস।
৩ জানুয়ারি ২০২৩
৩ জানুয়ারি ২০২৩
মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে পুরো দেশ।
আমি বসে আছি লুডু-গুটি হাতে
আর ভাবছি, ছক্কা যদি উঠে যায়
প্রথম মারে।
হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি
সবকিছুকে পাশ কেটে যদি
গড়তে পারি নতুন এক শুক্তি!
তবুও, আশা রাখি নিরন্তর
যদি শেষ মিনিটের গোলে
পুরো জীবনের দুঃখ ভুলে পরি।
০২/০১/২০২৩
যাকে তুমি ছোট করো
অথবা ভুলভাবে মূল্যায়ন করো।
একদিন তার কাছেই
ছুটে যেতে হবে তোমাকে।
যদি তুমি সত্যিকারের জ্ঞানী হয়ে উঠো…
সীমান্তের বাইরে যতো চোখ রাখি
ততো মিশে পরি দুঃখহীনতার স্রোতে।
অথচ চেনা বৃত্তের ভিতরে কতো দুঃখ,
আগবারিয়ে বন্ধুদের ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে
কতোই না বেদনা কিনেছি চড়া সুদে;
এখন বেদনার ফ্রিজ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ে
হরেক রকমের পরাবাস্তব সুখদুঃখ;
তাই আর না এঁকেও পারি না
দৃশ্য থেকে দৃশ্যছায়ায় অদৃশ্য হচ্ছে শত দুঃখ।
এমন সময় আসছে তেড়ে
এমন সময় আসছে তেড়ে
চিবিয়ে খাবে সত্যটাকে
মিথ্যার ওপর মিথ্যা দিয়ে
সাজিয়ে দেবে মগজটাকে।
জগত হবে অন্ধকার
মানুষ হবে গাধার পাল
মিথ্যেটাকে সামনে রেখে
হাসছে দেখ ডাকু সর্দার।
প্রকাশের সময়: ২৭/০১/২০২৩
এখন
এখন প্রয়োজন ছিল একটা সাচ্চা আত্মার
যার সাথে পাখির মতন জীবন কাটাতাম।
উত্তর থেকে দক্ষিণে উড়ে যেতাম একসাথে
আবার নীড়ে ফিরে অলস ভাবে এলিয়ে দিতাম সব।
কিন্তু এখন সবকিছুই প্রশ্নবিদ্ধ
নীলিমা দেখতেও টিকিট কাটতে হয়
পবিত্র অভিসারের স্বপ্নও বিলীন প্রায়
প্রবল উন্মাদনায় নেচে উঠে ভবিষ্যৎ।
প্রকাশের সময়: ০৭/০২/২০২৩
নিঃসঙ্গতার মাত্রা পেরিয়ে
নিঃসঙ্গতার মাত্রা পেরিয়ে
ঢুকে পড়ছি শব্দ আর বাক্যের যানজটে।
তবে একধরণের সুখ আছে এই জগতে
এখানকার সকল কিছুই মস্তিষ্কজাত,
দুঃখ নিয়ে বেড়ায় না কোন আত্মীয়;
অথবা বন্ধুত্বের নামে পকেট মারতে
আসেনা কোন বিদগ্ধ চতুর শেয়াল,
যাদের নাড়িতে নাড়িতে ঘুরে বেড়ায়
শত সহস্র সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার।
প্রকাশের সময়: ০৩/০২/২০২৩
ভিখারি প্রকাশক
এক ভিখারি প্রকাশককে চিনি
আমি বহুকাল ধরে।
দেখা হলেই হাত বাড়িয়ে বলতো
কিছু টাকা দেন,
ঘরে আমার চাল বাড়ন্ত,
দুইদিনের বুভুক্ষিত।
সেই ত্রিশ-বত্রিশ বছর আগে
তার হাতে নির্দ্বিধায় কত টাকা
তুলে দিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
অথচ কাল বইমেলায় দেখা হতেই
তার আচরণ দেখে বড়ই পীড়িত হলাম
আরেকবার, ঔদ্ধত্য, অজ্ঞতা আর
ভিক্ষাগিরি এখনও চিবিয়ে খায়
তার অসহিষ্ণু হৃদয়।
প্রকাশের সময়: ০৯/০২/২০২৩, ১৭:৫৫ মি:
এই শেষ
তারপর আর দেখা মিলবে না কখনও।
ভুলে যাবে অন্তরাত্মা তোমার সকল বাতুলতা।
পরিবর্তিত হবো নতুন এক বৃক্ষে
পাতাও গজিয়ে উঠবে আবার
শুদ্ধ জগতের আশায়।
তুচ্ছ বাক্যলাপগুলি যেদিন সত্য হয়ে ওঠে
তুচ্ছ বাক্যলাপগুলিও একদিন ঝরে পড়ে
শুঁড়িখানার গ্লাসে।
তোমার প্রতিফলিত বিবর্ণ চোখ
আর ক্ষয়ে যাওয়া মুখশ্রী তির তির
করে কাঁপে হুইস্কির স্বচ্ছ স্রোতে।
আমি নিভু নিভু আলোতে
রাঙ্গিয়ে তুলি সন্ধ্যাটা তোমার সুরে,
“শুধু পথে হেঁটে চলা
আর থেমে যেতে যেতে হেঁটে চলা
ভালোবাসি”
প্রকাশের সময়: ২৯/০৩/২০২৩, ১৮:৫৪ মি:
যাচ্ছি আমি
যাচ্ছি আমি তোমায় ফেলে
বারে বারে।
পাহাড়, পাহার তুমি ছেড়ে
নীরব অন্ধকারে।
তুমি এখন আমার সকল
দুঃখ কেবল;
আর আমি হলাম নিরো এখন
সুরের মোহে নির্মোহ এক
সুখী পাগল।
আমি জোর করে ভুলতে চাই
আমার দুর্দান্ত অতীতকে।
কারণ এখন আত্মীয়রা
পরিবর্তিত হয়েছে অনাত্মীয়রূপে।
টাকা ও ক্ষমতার মর্যাদায়
তারা সবাই নিঃস্ব আজ।
শেয়ালের মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
বেড়ায়, আত্মীয়তার সুযোগ।
আর আমি যেহেতু, সে সব খুঁজি না,
অথবা তোয়াক্কা করি না।
তাই আমি রূপান্তরিত হয়েছি এক
নিভৃত সন্ন্যাসী রূপে,
যাকে দেখে চতুর শেয়ালরা
আগেভাগেই কেটে পড়ে নিঃশব্দে।
মাথার ভিতরেই সূর্য
কেউ জানে, কেউ জানে না।
প্রচার কর না, জনসমক্ষে
উলটো হিতে-বিপরীত হতে পারে।
তেরোতেই কিস্তিমাত
সেই তেরোতেই আটকে আছি এখনও
হঠাৎ করে আটকে গেল দুরন্ত কৈশোর।
তখন আমার পিতা ছিল বটে, তবে তন্দ্রাচ্ছন্ন
আর মা গিয়েছিলো চাঁদের দেশে, মাতুতালয়ে।
সৌম্য, সভ্য সবই ছিল, ছিল না শুধু পর্যবেক্ষণ।
প্রকাশের সময়: ৩০/০৬/২০২৩, ২০:১৭ মি:
যদি উবে যায় মৌনতা
আর তাদের ছায়ার স্মৃতি,
রাঙিয়ে তুলে আবার দুঃখের নাব্যতাকে।
আমি, ভিড়তে গিয়েও, ভিড়ি না
সেইসব প্রিয় প্রান্তরে,
অতীত, মায়া, ঘৃণা আর রিজেকশনের তীব্রতায়;
যদি উবে যায় মৌনতা?
প্রতীতিবাদী স্টাইলে
প্রশ্ন করে দেয়ালের ছায়া মানুষটা বার বার।
আমি বলি হবে হবে, এবার থেকে তাই হবে,
ঘড়ি দেখা, মানুষ দেখা, যেখানে সেখানে
বৃক্ষ দেখা,
সব দেখাটা হবে এবার প্রতীতিবাদী স্টাইলে।
মানুষের সঙ্কীর্ণতা
মানুষের সঙ্কীর্ণতা বোঝা বড় দায়।
কে কখন আঘাত হানে
কার মুখে আগুন জ্বলে
আপন জনের এসব কিছু
অদ্ভুতুড়ে তাই।
যে যাকে ঘৃণা করে
করুক তবে আপন মনে।
ফিশফিশা ফিস, কানাঘুষা
অহেতুক সব অবহেলা
বিরাম তবে চাই।
প্রকাশের সময়: ২১/০৭/২০২৩, ১৮:১৩ মি:
কোথাকার কোন কাক
কার সাথে কথা বলে?
দৃষ্টি তার উচ্ছিষ্টে
আবার উদগ্রীব সে উড়তে।
আমি কিছুটা মানব,
কিছুটা নতজানু কাক।
বয়সে হাড্ডি নুইয়েছে
কিন্তু মনটা উড়ছে স্বর্গলোকে।
কাকে, কাকে কাকেশ্বরের
বন্ধুত্ব যেমন অসম্ভব,
কাকে, কাকে সর্বনাশ
অন্তরেও ছড়াচ্ছে ত্রাস।
এতো দুঃখের মাঝেও যে হাসতে জানে
এতো দুঃখের মাঝেও যে হাসতে জানে
সেই তো প্রকৃত মানুষ।
মানুষের কাদা ছুড়াছুড়িকে দিয়েছে
যে জলাঞ্জলি;
অস্বস্তিকে স্বস্তি বানিয়ে চুবিয়েছে
উইস্কির পেয়ালায়।
সেই তো পারে কেবল ফিনিক্সের
মতো উড়ে যেতে
জীবনের অপার সৌন্দর্যে।
প্রকাশের সময়: ২৭/০৭/২০২৩, ২৩:১১ মি:
এমন যদি হতো
বৃষ্টি দেখি, অথচ বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়ে না।
বেঁচে আছি, অথচ দুঃখ-কষ্ট ত্রিসীমানায় আসে না।
পৃথিবী ফিরে যাচ্ছে তার আদি-সত্তায়
নীলাভ গ্রহের উপমা হারিয়ে
শুক্র হওয়ার অপেক্ষায়।
আর আমি যাচ্ছি আমার গন্তব্যে
ছিটেফোঁটা কর্মযোগসহ,
একাকীত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
বন্ধু তুমি বলতেই পারো
আমি এক ভুলের সাগর।
তাই দুঃখ গড়িয়ে পড়ে
আমার পাহাড়ি ঢলে।
আর যদি ধরে নাও যে,
এই সাগরের কোন অস্তিত্ব নেই।
তাহলে আর ভুল কিসের
সবই আসলেই এক অভিযানের অংশ মাত্র।
এ কেমন জীবন
দেখা নাই,
অথচ সব ঘটনা স্পষ্ট এখন
মনের আয়নায়।
এ কেমন জীবন?
আমার আত্মাটা রোদ্দুরে ভেসে ওঠে
নেচে ওঠে ছায়ার আড়ালে।
আমি অনুভূতি দিয়ে তাকে ধরার
চেষ্টা করি মাত্র।
কিন্তু আবার আত্মার কথা ভুলে পড়ি
যখন রাজা হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে দিয়ে
প্রজা হওয়ার কথা ভাবি কেবল।
টাকার রাজ্যে আত্মার অস্তিত্ব খোঁজে কে?
এখানে সকলেই যে প্রেতাত্মা বনে
আবার স্বর্গে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
তাই আত্মার আমি এঁকে ফেলেছি, অনেকবার
যখন আমি জীবনের কথা ভুলে গিয়ে আত্মায় মনোনিবেশ করি।
সবুজ, বেগুনি, নীল অথবা রঙহীন আত্মার।
জীবনের প্রতি আগ্রহটা হারিয়ে ফেলছি
জীবনের প্রতি আগ্রহটা হারিয়ে ফেলছি
সেই কয়েক দশক ধরেই,
আগ্রহের মাত্রা এখন ব্যাটারির
পাঁচ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
কিন্তু একমুঠো রোদ্দুরের সান্নিধ্য
অথবা এলোমেলো মুক্ত বাতাস,
আবার আমাকে টেনে নিয়ে যায়
জীবনের জয় গানে।
এ এমন এক জীবন
যেন চাওয়া আর না চাওয়ার মাঝে
সদাই দোদুল্যমান।
যেন রোদ্দুরের ছায়া শয়তানটাই
কেবল জীবনের প্রতি মোহটা
টেনে হেঁচড়ে তুলছে অনবরত।
প্রকাশের সময়: ৩০/০৯/২০২৩, ১১:২৪ মি:
ঘুম থেকে জেগে দেখি
ঘুম থেকে জেগে দেখি
চারদিকে অদৃশ্য স্বার্থের দেয়াল
বুনে চলেছে লোভী মাকড়শার দল।
তাই আমি যেখানেই যাই
সেখানেই লেপ্টে যাই মাকড়শার জালে
তর্ক ওঠে মৌনতায়, কে কার স্বার্থ খায়?
আমি জানি, তারা কী চায়,
অথবা এই তর্কের শেষ কোথায়?
তাই নিমিষেই হারিয়ে যাই, অদৃশ্য জগতে।
প্রকাশের সময়: ১৫/১০/২০২৩, ১০:২৭ মি:
দারিদ্র ও সুখের পোড় খাওয়া এক বাড়ি
কোথাও জানি গড়মিল নেই একদম।
এই ভোগের পৃথিবীর লম্পটদের জন্য এক উদাহারন বটে
এপার্টমেন্ট, ডিটার্জেন্ট, ওয়াশিং মেশিনের প্রয়োজন কি ছিল পৃথিবীর?
তার চেয়ে স্টয়েকদের মতো নিভৃতে জীবন
আবার নতুন করে আশার আলো জ্বালাবে, আমার বিশ্বাস।
প্রকাশের সময়: ০৩/১০/২০২৩, ১০:০৪ মি:
ঘুমের দেশে কবে ফিরবে তুমি
সকাল সন্ধ্যা কেবল মনোযোগ।
আয়নার সামনের মানুষটার আর
অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না।
সীমাহীন আকাশে চোখ রেখে
জন্ম নেবে অদৃশ্য সব সম্ভাবনার।
ক্যাফিন সিক্ত গলায় ঘোড়ার
মতো যদি দাঁড়িয়ে থাকা যেতো?
তারপর না হয় আরেকবার
ফিরবে তুমি ঘুমের দেশে,
স্বপ্ন অনন্তকাল।
প্রকাশের সময়: ০৩/০৬/২০২৪, ১৭:১৫ মি:
ভালোবাসার শেষ সীমানায়
মনের আয়নায় দেখা সেই রেলগাড়ি, এখনও ছুটছে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ছবি এঁকে বসে আছে একজন,
অস্থির শহরের নির্জন বিকেল, অথবা আলোকিত এক রেস্তোরাঁয়,
আমরা কজন; আমি, অদৃশ্য আরেক আমি সাথে আমারই ছায়া।
চর্ম চক্ষুর সীমানা এড়িয়ে, যখন ছবি আঁকতে নিমগ্ন অদৃশ্য এক চোখ,
অদৃশ্য এক মন।
ছবির ফোয়ারা উতলিয়ে পড়ে,
আমাদের নিরানন্দ বিকেলে।
প্রকাশের সময়: ০১/০৬/২০২৪, ১৫:৫২ মি:
আজব লীলা
মিথ্যাচারের হুংকারে যারা অন্যের ঘাড় মটকে দিতে চায়।
আসলে তাদের অথর্ব ধড়িই, মাটির সান্নিধ্যে এগিয়ে বেশি।
চৌর্যবৃত্তির অন্তরালে তাদের মাটির দেহে আজ শত শত ঘুন।
রক্তাক্ত রাঙ্গানো চোখে তাদের ভাসে কেবল মানুষের খুন।
কী আজব এক পৃথিবীতে আমাদের বসবাস,
পশুদের বন উজাড় করে, নর-পশুরা আজ
ঘুরছে কংক্রিটের আনাচে কানাচে
প্রশ্নবিদ্ধ অভিব্যক্তি আমাদের শেষ হাতিয়ার।
আমি এক জ্যাজি মানব
আমি এক জ্যাজি মানব,
আর্মস্ট্রং এর ট্রাম্পেটের মতো
সুরের বুলেট ছুঁড়ি আকাশে ।
সুর আর অসুরের ঐকতানে
আত্মীয় কে করি অনাত্মীয়
চুরমার করি কর্ডের থিউরি।
আমি এক জ্যাজি মানব,
দানবের সাথে আড্ডায় মেতে,
ঝর তুলি শুঁড়িখানার পিয়ানোতে।
আবার জনবহুল ফুটপাতে বসে
সৃষ্টি করি যতো উন্মাদ ক্যানভাস।
আমি, তুমি, সে, সবাই কেটে পড়ে
আমার এই ভয়ংকর সুন্দর সৃষ্টি দেখে।
গিটার
বৃষ্টিতে ভিজে যে গিটার আজ যবুথবু
তবুও তার জং ধরা তারে সুর বেজে ওঠে।
স্টাফ নোটেশনের অদেখা পাতায় কিংবা
প্যাগানিনির পেশিযুক্ত সুরে, সময়ও বেঁকে বসে,
মানুষের বোধগম্যতার সীমানার বাইরে।
বিষণ্ণ বৃষ্টির ম্যারাথনে কতো বিরক্ত ছড়ায়
তোমার আমার সীমানাবিহীন আন্দিজ উপত্যকায়।
মেঝেতে জল, টেবিলে জল অথবা দেয়াল থেকে
চুইয়ে পড়া পানি, সবকিছুতেই আজ অভ্যস্ততার ছাপ,
তবুও মোম লাগানো গিটারের তারে এতো কেন সুর?
এই প্রাচীন হৃদয়ে
কখনো কখনো আমাকে বড়ই ব্যথিত করে মানুষের আচরণ।
একটু আধটু বিচলিত হলেও, আবার জেগে উঠি রঙিন স্বপ্নে।
গিটারের তারে, কার্টিজ পেপারে অথবা বইয়ের পাতায়
ঐ যে আমি জেগে আছি মহাকাব্যিক মৌনতায়, থামাবে কে?
একদিন ড্রয়িং রুমের ছবি হবো, খোলা আকাশের ঘুড়ি হবো।
এই সবকিছু ছাপিয়ে, একদা আমি যে, পৃথিবীর কবিতা হতে চেয়েছি,
সেই কথা ভাবতেই আকাশসম সাহস জেগে ওঠে, এই প্রাচীন হৃদয়ে।
পনেরো তলার বন্ধুদের
পনেরো তলার বন্ধুদের দেখিনি আজ অনেককাল
বিকেল জুড়েই আড্ডায় মেতে কেটেছে বহুকাল।
গিটার হাতে জানালাতে দেখেছি সন্ধ্যার রূপ
ঘনবসতির শহর তবুও পেয়েছি অনেক সুখ।
দেখার আনন্দে, শোনার আনন্দে, বন্ধুদের আনাগোনায়
হারিয়েছিলাম নিজেকে একদা মিষ্টিমধুর দোটানায়।
বাসায় ফিরতে দেরি হতো তাই
ছেড়ে অবেলায় বন্ধুত্বের হাত
বন্ধুদের সাথে জীবনটা যেন
মহাকাব্যিক এক অনুরাগ।
গানের সুরে ব্যবসায়ী, চাকুরে
হয় যদি একাকার।
সুখটানে দুঃখ তবে
হবে কুপোকাত।
আমায় নিয়ে ভাবছে যে জন
আমায় নিয়ে ভাবছে যে জন
তাকে আমি করি যতন।
দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে
কেটে যে যায় এ-জীবন।
সে আর নয়কো কেউ
আমার ছোট্ট মানিক রতন
হাজার নামে ডেকে ডেকে
মগ্ন থাকি সারাক্ষণ।
রাজকুমারী, এখন থেকে
তোমায় নিয়ে চলবে
জীবন-ঘড়ি;
তোমার বৃদ্ধি দেখতে দেখতে
যেন কুশল চিন্তায়
মরি।
পৃথিবীর যতো দ্যা ভিঞ্চি
পৃথিবীর যতো দ্যা ভিঞ্চি – বেঁচে আছে এখনও ঘুরে ঘুরে;
অথচ নকল জ্ঞানীরা এখন প্রমত্ত তাদের চামড়া চিবিয়ে খাবে বলে।
বারুক যুগের সকল নিপুণ পলিম্যাথ কিংবা
রোম্যান্টিক যুগের তীব্র সংবেদনশীল আত্মারা,
প্রতিনিয়ত ধরা দিয়ে যায় আমার ধ্যানের আসনে।
ভিন্সেন্টের নীলাভ বিষন্ন রঙ অথবা জপ্লিনের
বিদ্যুৎ গতির সুর সব নিভে যাচ্ছে হিংসুটে প্রফেসরদের
বার্থডে পার্টিতে এক এক করে।
আমি শুধু বেঁচে আছি নিঃসঙ্গ এক ভিঞ্চি হয়ে
এইখানে, এই সমতলের চতুর কাঠমোল্লাদের দেশে।
সকাল বেলার দৌড়
দৌড়ের প্রতি আমার উৎসাহ দেখে বন্ধুরা ঢেঁকুর তোলে।
এই বয়সে দৌড়? কিন্তু সহজাত প্রতিভা বলে কথা।
সুপ্ত থাকলেও হার মানতে নারাজ। তাই দিনের বেলায়
ভোঁ দৌড়ের বদলে নির্মল সকালটাই বেছে নিলাম।
ওদিকে রাত জুড়ে টিভির পর্দায় মেক্সিকোর তারাহুরামা জাতীর
দৌড়ের প্রতিভা দেখে ভাবলাম বয়সটা অজুত নিযুত
যতই হোক না কেন, আজ থেকেই একক দৌড়ের যাত্রা হোক।
শুনে আরেক লেখক দৌড়বিদ “হারুকি মুরকামির”
পোট্রট খানাও হেসে ওঠে বইয়ের মলাট থেকে,
আর বলে ব্যাটা আমার বইটাই শেষ করতে পারলি না,
তুই দিবি আবার সকাল বেলার দৌড়?
সংশয়বাদী নারী
আমার আমার, বলতে বলতে,
যে নারী সীমাহীন দুঃখ নিয়ে বেড়ায়।
তার আঁচলে নারীসুলভ গন্ধের সুখ
কবে যে হারিয়ে গেছে,
সে নিজেও জানে না।
কিন্তু আমি সেই সুখ খুঁজে পেয়েছি,
কোন এক তারকারাজির রহস্যময়
আলোকরশ্মির ভিতর।
মাঝে মাঝে, সন্ধ্যা নামার অনেক পরে
সেই নারীর হঠাৎ উদয় ঘটে,
ভিন্ন ভিন্ন অজুহাতে, ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের সুরে;
বলা বাহুল্য বাতাসও ভারী হয়ে ওঠে,
তার কটকটে বডি-লোশনের গন্ধে।
সে আমাকে প্রশ্ন করে,
‘তুমি এখন কোন ভাবনায় মগ্ন?
আমার নিরবতায়, সে যে উত্তর খুঁজে পায়,
তাও অনুভব করি আমি অদৃশ্য পরচিত্ত-বিজানন জ্ঞানে।
“সে ধরে নেই, অন্যকোন নারীর উপস্থিতির কথা,
অথচ আমি তখন মগ্ন তারকারাজির রহস্যময় উন্মাদনায়।
অতীতকে গিলতে গিয়েও থেমে যায় মানুষ
অতীতকে গিলতে গিয়েও থেমে যায় মানুষ।
কোথাকার কোন এক খবরের কাগজ জুড়ে কেবল দুঃখ;
সে তথাস্তু পৌঁছায় কুকুরের ঘ্রাণ শক্তির প্রখরতায়।
তাই সে “গুয়ের্নিকা” আঁকার বদলে নিজেই গুয়ের্নিকা বনে যায়।
পিকাসো, মানুষের ঐ দুঃখবাদী রূপটিকে ভালো করেই চিনতো, জানতো।
তাই জীবনকে উপলব্ধি করেছেন ত্রিমাত্রিক চর্ম চক্ষু দিয়ে।
আমাদের দেখার পালা কবে শেষ হবে জানিনা।
তবে আঁকার পালা যে খুবই সীমিত,
সেটা জেনেও গিলে বসে আছি ছেলেবেলার মোমরঙ।
মাথার ভিতরে ভোঁভোঁ করছে ক্যানভাসের দল;
নারীর স্তন পেরিয়ে ফুলের তোড়া হাতে আসছে প্রেমিক;
তবে এবারকার ফুলগুলোও রসকষহীন,
ঠিক ভ্যান গগের মতো।
বৌদ্ধিক আলো
কাকে বলি দুঃখের কথা
কেই বা বুঝবে মর্ম-ব্যাথা?
আছি যেমন তেমনি ভালো
মনে যখন বৌদ্ধিক আলো।
এলোমেলো মিউজিক রুমের পুরনো গিটার ও একজন সিজারের গল্প
এলোমেলো মিউজিক রুমের পুরনো গিটারটা
আমাকে সারাজীবন আকর্ষণ করে যায়,
কোন এক পরাক্রমশালী সম্রাটের প্রিয় সম্রাজ্ঞীর মতো।
তার তারের ঝংকারে আমি সর্বদাই আপ্লুত
তা দেখে অন্য গিটার-সুন্দরীগুলো বেঁকে বসে,
আমার অবর্তমানে হয়তো প্রিয় সম্রাজ্ঞীর সাথে
জুড়িয়ে দেয় তর্ক; আর বলে, এতোটা পক্ষপাতিত্ব কী ঠিক?
কিন্তু আমি তাদের প্রতিও সমান অনুগতশীল,
যদিও বয়সের ভারে, এই আমি নামক সম্রাটের
ইচ্ছেটা কিছুটা নুজ্জ; তাছাড়া এই বয়সে
প্রতিটা গিটার-রানীর গায়ে সোনার তার
মুড়িয়ে দেয়া যেমন ব্যয় সাপেক্ষ তেমনি গ্লানিকর।
তবে কথা হচ্ছে, এই সম্রাট যদি সিজারের মতো
সর্বদায় রণ-মুখী হতো, তবে কি আর গিটার-রানীগুলো
ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাত?
বরং তারাও বহুগামি সম্রাটের সান্নিধ্যে
নতুন নতুন রাজ্য জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকতো।
আর তাতেই যুক্ত হতো নব নব সুর,
নব নব উদ্দীপনা।
চতুরঙ্গে বসবাস করে শতভাগ ক্ষমা আশা করা যায় না
চতুরঙ্গে বসবাস করে শতভাগ ক্ষমা আশা করা যায় না।
যেরকম রাবার দিয়ে মোছার পরও থেকে যায় পেন্সিলের ক্ষত।
কিংবা মাতৃগর্ভের স্মৃতি নিয়ে যেভাবে মিশে পড়ে হোমো-সেপিয়ান্স।
তাই আমি এক প্রয়াত বন্ধুর শবযাত্রায় সামিল হয়েও অনুপস্থিত হতে চাই।
আপাতত জীবনটা যতোটাই মৈত্রীময় হোক না কেন;
অদৃশ্য অভিমান বলে একটা শব্দ যুক্ত আছে আমাদের অভিধানে।
মানুষে-মানুষে সম্পর্কে এতো দুঃখ বইয়ে বেড়ায়
সেটা জেনে বোধয় কুকুরের দল মানুষের সাথে ভাব জমায়।
কারণ নির্বাক কুকুরের বোধশক্তির কাছে বারবার হার মেনেছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব।
এবার বলতে পারো, মানুষ ও কুকুরের মাঝে আসল তফাতটা কই?
একজন আক্রমণকারীর পিছু পিছু আজীবন ঘেউ-ঘেউ করে বেড়ায়;
আর আরেকজন ক্ষমার ঝুলি নিয়েও পিছু হটে যায়
তারপর নির্জনে মিশে পড়ে অশ্রু-মায়ার গহিন ক্ষত নিয়ে।
জনপ্রিয়তা কখনও আসল শিল্পীর মাপকাঠি হতে পারে না
~(প্রয়াত মেরাজ হোসেনের উদ্দেশ্যে লেখা)~
আমি এক প্রয়াত ব্লুজ-ম্যানের কথা বলছি।
যে তার গিটারের যাদুতে রাঙ্গিয়ে দিয়েছিলো
আমাদের স্বপ্নকে একদা।
যদিও আমরা এখনও স্বপ্ন দেখি, বুনি;
জড়ো করি পৃথিবীর সব হারানো গিটারিস্টদের
অদ্ভুতুড়ে এক কনসার্টে।
কিন্তু সেই আয়োজনে “মেরাজ হোসেনের”
আবির্ভাব ঘটে বিদ্যুৎ গতিতে,
সবার মধ্যমণি হয়ে।
কারণ তার আসন আমাদের কাছে সবার ওপরে
কি হেন্ড্রিক্স, কিই বা বি-বি-কিং?
মেরাজ আমাদের ক্রুসেবিদ্ধ সেই তারকা
যে আমাদের হাতে কলমে শিখিয়েছে
জনপ্রিয়তা কখনও আসল শিল্পীর
মাপকাঠি হতে পারে না।
মৃত্যু যখন হবে
আমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে সবসময়
কখনও স্যাঁতসেঁতে জমির ফলন্ত ধ্যানী বেশে;
কখনও বা গেরুয়া বসনের মৈত্রীর রাজা সেজে।
কিন্তু অর্থহীন এই জীবনের অস্তাচলে
যেভাবে জট পাকিয়ে বসেছে নীলাভ বাস্তবতা,
তাকে সামলাবে কোন রাজা?
শুধু পুত্রকন্যার দিয়ে তাকিয়ে থেকেও জীবন যেত
কিন্তু তাদের ঘিরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে
যেসব অমানবিক আইন,
তাদেরকে মানবতা শেখাবে কে?
এখন মধ্যবয়সে পা রেখে ভাবছি
কিভাবে এই জীবনের শুভ ইতি ঘটবে একদিন।
কিন্তু সেই সমাপ্তির ঘাড়েও জমেগেছে
প্রচুর অমীমাংসিত দ্রব্য, গান, কবিতা, সুর
আরও কতো কি?
তাই মাঝে মাঝে ঐ মৃত্যুর কথা ভাবতে ভাবতেই
নিবিষ্ট হয়ে পড়ি এক অভুতপুরব ধ্যানে
যার নাম দিলাম “মৃত্যু যখন হবে।”
পৃথিবীটা ঘুরছে কার আশায়
জীবনকে দেখছিলাম ২০২২ সনের প্রেক্ষাপটে
যদিও মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত তাদের
জেম্স ওয়েব ক্যামেরা নিয়ে।
“নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে দুই সূর্যের অক্ষে ঘুরে বেড়ানো
নতুন কোন বাসযোগ্য দুনিয়ার গল্প”
ওসব তথ্য আমার মস্তিষ্কের জন্য সুখকর।
আবার প্রশ্ন জাগে, অতীতের পৃথিবীতে কী
চোখ রাখতে পারে নে, জেম্স ওয়েব?
(যদি সে হাজার কোটি বছর পূর্বের
মহাবিশ্বের ছবি তুলে আনতে পারে)।
আমার প্রসঙ্গ সেখানে না;
আমার বিষয়, দৃষ্টিকোণের হিসেবনিকেশ।
“আমরা মানুষরা কী ঘুনেধরা, গড়পড়তা
দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি না?”
এই যে, মানুষ কথায় কথায় ইতিহাস নিয়ে আসে;
নিংড়ে আনে অতীতের ভবিষ্যৎ বানী।
কিন্তু কেন? নতুন কোন যুদ্ধের জন্য?
আমরা মানুষরা কী এক হতে পারি না
শুধু একটি দিনের জন্য?
বাঁচতে পারি না বৃক্ষ আর প্রাণীকুলের আলিঙ্গনে?
নাকি আমরা কেবল ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে ঘরে ফিরব,
পকেটে এই বিল, সেই বিল ধারণ করে।
তারপর বুড়ো পৃথিবীটা বিকিয়ে দেব
কোন এক ধূর্ত বিলিয়নিয়ারের হাতে!
তারপর সেই বিলিয়নিয়ার, ট্রিলিয়নিয়ারে
রূপান্তরিত হয়ে পৃথিবীটার দিকে তাকিয়ে
গাইবে, “পৃথিবীটা ঘুরছে আমার আশায়”।
যে সুখ আমি চেয়েছিলাম
যে সুখ আমি চেয়েছিলাম
সেই সুখ সবারই আছে।
তাই মাথার ভিতরের রসায়নকে
পালটিয়ে দেখতে চেয়েছি;
জানিনা, এই জীবন আমার হবে কিনা?
নাকি পূর্ব জীবনের পুনরাবৃত্তি?
ছেলেবেলার ফুটবল মাঠে বসে
বেঁধেছিলাম যে সুর;
সেই সুর আজও অক্ষত।
বেজে ওঠে অমলিন
মাথার ভিতরের অর্কেস্ট্রাতে।
চেনা মানুষ, আপন বন্ধু,
কিংবা সবচেয়ে কাছের মানুষ,
যাকে তোমরা প্রেয়সী
বলে সম্বোধন করো।
তাকেও আমি হারিয়েছিলাম
মস্তিষ্কজাত অপাংতেয়
রাসায়নিক বিক্রিয়ায়।
বলা বাহুল্য যে,
আমি সেই শত্রুকে
পরাজিত করেছি একটিবার
এবং বিজয়পতাকা নিয়ে
এগিয়ে চলছিলাম বিশ্ব-সংস্কৃতি সংঘের মঞ্চে।
কিন্তু বারবার হানা দিয়ে বসে
কোন এক হায়েনা-শকুনের দল;
ছত্রভঙ্গ করে ফেলে আমার
সাজানো অপেরা,
অথবা বিমূর্ত ক্যানভাস।
এইতো গত দুবছর আগে
আমি রীতিমতো ফিনিক্সের মতই
ডানা মেলে পৌঁছে যাচ্ছিলাম
আমার প্রিয় সাইবেরীয় ঠিকানায়।
হয়তো আর কিছুদিন শীত নিদ্রায়
থেকে এমন ভাবে ডানা ঝাপটাবো
যাতে বেতোফেনের মৌন সুর
অথবা শোপাঁর কাব্যিক পিয়ানো
অন্তর-আত্মা থেকে প্রকাশ পায়।
তাই আজ আর কবিতার তেজ
বৃদ্ধি করলাম না।
ব্যাপ্ত করলাম আরধ্য সপ্নের
যে স্বপ্ন একদিন এই আমাকে
পৌঁছে দেবে ঠিক তোমাদের ঠিকানায়।
অনুঘটনের অপেক্ষায়
বসে আছি কেবল অনুঘটন দেখবো বলে।
শরীরের ভিতরকার অন্তর আত্মাকেও
একদিন ছাপিয়ে যাবো বলে।
না, কাউকে বলতে যেও না, সে কথা।
শুনলে তাদের ঘৃণার ঘা জন্মাবে,
পুঁছ ঝরবে ওদের মনের
রুটির টুকরো থেকে।
এই আমিতো কেবল মঙ্গলের জন্যই জন্মেছিলাম;
তাই মঙ্গল দিয়েই শেষ দৃশ্যের ইতি হোক।
না তোমাকে আহত করছিনা,
হে আমার অপ্রিয় বন্ধু।
বরং তোমাকেও আহবান জানাবো
সেই দুর্ধর্ষ দিনে।
এবং নাড়িয়ে দেখাব প্রথম সূর্যটাকে।
গিটার
বৃষ্টিতে ভিজে যে গিটার আজ যবুথবু
তবুও তার জং ধরা তারে সুর বেজে ওঠে।
স্টাফ নোটেশনের অদেখা পাতায় কিংবা
প্যাগানিনির পেশিযুক্ত সুরে, সময়ও বেঁকে বসে,
মানুষের বোধগম্যতার সীমানার বাইরে।
বিষণ্ণ বৃষ্টির ম্যারাথনে কতো বিরক্ত ছড়ায়
তোমার আমার সীমানাবিহীন আন্দিজ উপত্যকায়।
মেঝেতে জল, টেবিলে জল অথবা দেয়াল থেকে
চুইয়ে পড়া পানি, সবকিছুতেই আজ অভ্যস্ততার ছাপ,
তবুও মোম লাগানো গিটারের তারে এতো কেন সুর?
এই প্রাচীন হৃদয়ে
কখনো কখনো আমাকে বড়ই ব্যথিত করে মানুষের আচরণ।
একটু আধটু বিচলিত হলেও, আবার জেগে উঠি রঙিন স্বপ্নে।
গিটারের তারে, কার্টিজ পেপারে অথবা বইয়ের পাতায়
ঐ যে আমি জেগে আছি মহাকাব্যিক মৌনতায়, থামাবে কে?
একদিন ড্রয়িং রুমের ছবি হবো, খোলা আকাশের ঘুড়ি হবো।
এই সবকিছু ছাপিয়ে, একদা আমি যে, পৃথিবীর কবিতা হতে চেয়েছি,
সেই কথা ভাবতেই আকাশসম সাহস জেগে ওঠে, এই প্রাচীন হৃদয়ে।